বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭

"লোহিত পর্বত" (Red Mountain) এর পাদদেশে যাওয়ার প্রথম ব্যার্থ প্রচেষ্টা

এই Red Mountain এরিজনা আসার পর থেকেই আমাকে চূড়া-ছানি দিয়ে ডাকছে আর কানে কানে ফুসমন্তর দিয়ে যাচ্ছে "তুই লাল পাহারি দেশে যা ... হিত্থাক তোকে মানাইছে না রে..."। ভ্যালি-মেট্রো'র বাসে চড়ে Power-Road পর্যন্ত গেলাম। তারপর সাইকেল চালিয়ে রওয়ানা দিলাম Flat-iron Mountain লক্ষ্য করে (সেটার নাম তখনও জানতাম না, পরে বাসায় এসে map দেখে জেনেছি) মাইল সাতেক চড়াই বেয়ে সাইকেল চালিয়ে যখন মনে হচ্ছিলো প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি, তখন map-এ মেপে দেখি এখনও অর্ধেক রাস্তা বাকি। পর্বত-জাতি মানব জাতিকে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে এই ধোঁকা দিয়ে আসছে... ইতিপূর্বে অনেকবার এই 'হাতছানি'র ফাঁদে পড়ে এই শিক্ষা আমার ইতিমধ্যেই হয়েছে। লোহিত পর্বতের পাদদেশে এই শীতে রাত্রি যাপনের কোন ব্যাবস্থার নিশ্চয়তা পেলে বাকি পথও চলে যেতাম... আমার এই লাগামহীন দ্বিচক্রযান নিয়েই। আজকের মতো লোহিত-পর্বতকে রেহাই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম --- অন্য কোন একদিন তাকে দেখে নিবো এই পণ করে দূর থেকেই পাহাড় গুলার কিছু ছবি তুলে ফেরার পথ ধরলাম। ফেরার সময় টের পেলাম এতক্ষণ চড়াই বেয়ে সাইকেল চালিয়েছি ... সাইকেল সাঁই-সাঁই করে নেমে যাচ্ছে - প্যাডেল খুব বেশি না চেপেই। বাসায় ফিরে ম্যাপ ঘেঁটে আবিষ্কার করলাম- আমি যাকে লোহিত পর্বত ধরে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেটা আসলে Red Mountain না। লোহিত পর্বত আসলে উত্তর দিকে, আমি গিয়েছি পূর্ব দিকে। :-( অবশ্য আমি যেদিকে যাচ্ছিলাম সেই এলাকায় বেশ কিছু ভালো হাইকিং এবং ট্রেকিং ট্রেইল আছেঃ Lost Dutchman State Park, Flatiron Mountain, Superstition Mountains, Peralta Trailhead, Lone Pine Trailhead, Browns Peak এবং Four Peaks Wilderness সেগুলাতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে। শেষের তিনটা অবশ্য বেশ দুর্গম -- সেগুলাতে "বড় হলে" যাবো। বিঃ দ্রঃ ইদানীং Facebook -এ "আমার অবস্থাদৃষ্টে" (seeing my 'Status'es on Facebook) এই ভুল ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে পি এইচ ডি তে আমার গবেষণার বিষয়বস্তু "উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পর্বতসমূহের রং-রূপ এবং উচ্চতা নিরূপণ" সঙ্ক্রান্ত কিছু একটা।
[এই লেখা ফেসবুকের এই পোস্ট থেকে কপি পেস্ট করা।]

মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

ফিনিক্স এর দক্ষিণ-পর্বত (South Mountain) ভ্রমণ

ডিসেম্বরের ১১ তারিখ সকাল সকাল সাইকেল আর এক বোতল পানি নিয়ে বের হয়ে গেলাম সাউথ মাউন্টেন এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। Apache & McClintock Drive থেকে Valley Metro'র একাশি নম্বর বাসে চড়ে প্রথমে গেলাম বেইজলাইন রোডে, তারপর সেখান থেকে ৭৭ নম্বর বাসে গেলাম সেন্ট্রাল এভিনিউ তে, তারপর '0' (zero) নম্বর বাসে চড়ে গেলাম সাউথ মাউন্টেইন এর কাছাকাছি।
যাওয়ার পথে একটা ঘোড়ার আস্তাবল চোখে পড়লো। জীবনে ঘোড়ার আস্তাবল আগে কখনো সামনাসামনি দেখি নাই।
আমি Holbert Trail দিয়ে উপরে উঠেছি। ট্রেইল-টা অনেক ঘুরানো পেঁচানো, খাঁড়া না। এইটাতে উঠা তুলনামূলক সহজ, ক্যামেলব্যাক এর তুলনায় তো বটেই, আমাদের সীতাকুণ্ডের চেয়ে-ও। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে Camelback - এর উপরে, সীতাকুন্ডে'র ধারে কাছেও না। তবে উপরে হাইকিং এর ভালো জায়গা আছে, বেশ উপরে উঠা'র পর দেখি বিস্তৃত জায়গা প্রায় সমতল -- মালভূমি'র মতো।

গাড়ি নিয়ে একদম Dobbin's Lookout পর্যন্ত যাওয়ার ব্যাবস্থা-ও আছে; ভালো মানের সাইকেল থাকলে এবং "সাইক্লিং" এর অভ্যাস থাকলে সাইকেল চালিয়েও চূড়ায় উঠা যায়। তবে আমার-টার মতো স্বস্তা "পঞ্চাশ-টিক্কা, ছেকেন্ হ্যান্ড, পিছের চাক্কার ব্রেক ছাড়া" সাইকেল হলে নিচে গাছের সাথে তালা দিয়ে হেঁটেই উঠতে হবে।



Dobbin's -এ উঠার পর খেয়াল করলাম এইটা এইখানকার সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ না, আশেপাশে আর বেশ কিছু উঁচু উঁচু পাহাড় আছে। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে সেটা থেকে কিছুটা নিচে নেমে পার্শ্ববর্তী আরেকটা চূড়ায় উঠলাম। সেটা একদম পাথুরে।
একটা শৃঙ্গ থেকে আরেকটায় যাওয়ার পথে মালভূমি'র মতো জায়গাটায় খেয়াল করলাম বেশ বড়সড় শুকিয়ে যাওয়া স্রোতধারার (stream) দাগ রয়েছে। দেখলে বোঝা যায় এখান দিয়ে এককালে খরস্রোতা ঝর্ণাধারা বয়ে যেতো। Stream-গুলা বালি/নূড়িময় - ওগুলাতে হাঁটা কষ্ট। 
ফিরে আসার সময় সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সুবিধা টের পেলাম। South Mountain-এর পাদদেশ থেকে Downtown Phoenix পর্যন্ত পুরা রাস্তাই ঢালু/উৎরাই ... ফলে, নামমাত্র প্যাডেল চেপেই প্রায় সাড়ে ছয় মাইল রাস্তা পার হয়েছি। 
তবে শুধু সামনের চাকার ব্রেক নিয়ে এই রাস্তায় সাইকেল চালানো-টা বেশ বিপদজনক।

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

"পাপাগো পার্কে"-এ এক বিকালে

বিকালবেলা খুব নিঃসঙ্গ লাগে, ঘরে মন টিকে না, হাঁটার জন্য 'পা চুলকায়', মন চায় - যে দিকে দুই 'পা' যায় সেদিকে চলে যাই। কাঁটাতরু ক্যাকটাসের সংসর্গে গেলে পায়ের এই চুলকানি হয়তো কিছুটা লাঘব হবে এই আশায় আজকে বিকালে বের হয়েছিলাম মরুর বুকে মরুদ্যানের সন্ধানে, কিন্তু আমার "পাষাণ" "ছিদ্রান্বেষী" মন আমাকে টেনে নিয়ে গেল "Hole in the Rock" এ (Scottsdale -এর Papago Park এর কাছে)।

পাথুরে টিলাটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কীভাবে উপরে উঠবো। আমি আসার কিছুক্ষণ আগে একদল অভিযাত্রী এইপাশ দিয়েই উপরে উঠেছে দেখেছি। আমি উপরে ওঠার যুতসই পথ খুঁজতে লাগলাম। একটা সরু পথের মতো পেলাম, কিন্তু ঢাল-টা বেশ খাঁড়া। এখানে সেখানে কিছু ছোটখাটো গর্ত আর কিছু উঁচু হয়ে থাকা পাথর অবশ্য আছে, কিন্তু সেগুলা ছড়ানো ছিটানো। তাছাড়া এই টিলা আমাদের সিলেটের উর্বর মাটির গুল্মসমৃদ্ধ টিলা না যে পা পিছলে গেলে গাছের গোড়া-টা ধরে কিংবা মাটি-টা খামচে ধরে পতন ঠেকাবো। এই ঢাল বেয়ে উঠতে শুধুমাত্র শক্তসমর্থ পা-টা থাকলেই চলবে না, বুকের 'পাটা' থাকাও জরুরী।
ফিরে যাবো চিন্তা করছি এমন সময় দেখি আরও এক দল অভিযাত্রী এসে উপস্থিত, একটা পরিবারই হবে, বাপ-মা এবং পনের-ষোল বছরের একটা মেয়ে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি বিভিন্ন কসরৎ করে সেই "দূর্গম" ঢাল বেয়ে তারা সপরিবারে তরতরিয়ে উপরে উঠে গেলো ! আমি পড়ে গেলাম লজ্জ্বার মধ্যে। এর মধ্যে দেখি এরা উপরে উঠে আমার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে; আমি কী করি সেটা দেখা'র জন্যই হয়তো (মনে হল যেন একটু মিটিমিটি হাসছে-ও, কী জানি হয়তো আমার চোখের ভুলই হবে, দূর থেকে দেখেছি তো...)।
আমি খানিকটা এদিক সেদিক তাকিয়ে, কিছুক্ষণ ইতস্তত করে অবশেষে উঠা শুরু করলাম। পথের দুই পাশে'র পাথুরে দেয়ালে হাত দিয়ে ঠেস দিয়ে উঠতে হচ্ছে। মাঝপথে এসে একটু জিরানোর জায়গা পাওয়া গেলো, খানিক-টা সমতল। ব্যাপারটা যতোটা কঠিন ভেবেছিলাম আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। পরের অংশ-টুকু আরও বেশি খাঁড়া এবং চিপা। বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। নেমে যে যাবো সে উপায়ও নাই, নীচের দিকে নামতে গেলে পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। ...
যাই হোক, বর্ণনা আর দীর্ঘায়িত করলাম না। যেহেতু এই লেখা লিখছি, বুঝাই যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমি মরি নাই। ওজনের দিক থেকে মেট্রিক পদ্ধতিতে 'নার্ভাস-নাইন্টিস্‌'-এ থাকা (অল্পের জন্য 'সেঞ্চুরি' করতে না পারা) আমার এই দশাসই বপুখানা নিয়ে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে কোনমতে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছি। উপরে উঠে আশেপাশে'র দৃশ্য দেখে অবশ্য মন-টা ভালো হয়ে গেল। লোকজন এইখানে আসে মূলত সন্ধ্যা'র সময়েই, সূর্যাস্ত দেখা'র জন্য। আমি সময়মতোই গিয়েছিলাম। খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
উপরে ওঠার পর থেকেই একটা দুশ্চিন্তা পেয়ে বসলো, উঠে তো গেলাম, নামার সময় কি এই ঢাল ধরেই নামতে হবে? হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম, উপরে অনেক লোকের মধ্যে একটা চার-পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চা ছেলেও আছে। তখনই সন্দেহ হল। এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলাম। যা ভেবেছিলাম তাই, টিলা'র অপর পাশে'র ঢাল প্রায় সমতল বললেই চলে। অহেতুক ওই খাঁড়া ঢাল বেয়ে এইখানে উঠেছি। ঘুরে অপর পাশ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে উঠলেই পারতাম।
শিক্ষা ১ঃ দূর্গম এবং বিপদজনক পথে নামার (/উঠার) আগে ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই।
শিক্ষা ২ঃ আমেরিকান-রা অনেক উদ্ভট কাজই খুব অনায়াসে হাসতে হাসতে করে, সেগুলার সব আমার উপযোগী এবং অনুকরণীয় তো নয়ই, বরং অনেক ক্ষেত্রেই বর্জনীয়।
















লেখাটা ফেসবুকে' এই পোস্ট থেকে কপি পেস্ট করা।
সেখানে ছবিগুলো দেখা যাবে আশা করা যায়। ]

শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চেইজ ফিল্ড - স্টেডিয়ামে বেইজবল খেলা দেখা

ডিপার্টমেন্ট থেকে নতুন পি এইচ ডি ছাত্র-ছাত্রী-দেরকে বেইজবল খেলা দেখতে নিয়া গেছিলো।
আমার ধারণা ছিল বেইজবল 'আউট-ডোর' খেলা। কিন্তু এইখানে দেখি সবদিক আবদ্ধ পুরাপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল 'ইনডোর' স্টেডিয়াম। (অবশ্য খোলামেলা হলে এরিজোনা'র উত্তপ্ত আবহাওয়ায় বাহিরে বসে খেলা দেখতে লোকজন আসতো না।) আমার জীবনে প্রথমবার কোন স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা। দেশেও কোনদিন কোনো খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যাই নাই, এইখানে মাগনা পাইয়া আসলাম। এইসব বল ছোড়াছুড়ি দেখার কিছু নাই, বিশেষতঃ খেলার নিয়মকানুন যেহেতু ভালোভাবে জানি না। আমি ফ্রি খাবারদাবারের লোভেই মূলত গেছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি আমার খাওয়ার উপযোগী খাবার বলতে শুধু চিপস, বাদাম আর মাংসহীন "গরম-কুকুর" (Hotdog বানানোর বন-রুটি-টা শুধু)। এর সাথে ছিল অবারিত 'কার্বনেটেড' বারি-ধারা (soft- drinks)।

আমরা যাওয়ার আগে অবশ্য ডিপার্টমেন্টের এডভাইজার-রা আমার মতো গণ্ড-মূর্খ ছেলেপেলেদের জন্য বেইজবল খেলা সম্পর্কিত একটা নাতিদীর্ঘ লেকচারের আয়োজন করেছিলো - সম্ভবত আমরা যাতে গ্যালারি-তে বসে কখন করতালি দিতে হবে সেটা সময়মত বুঝতে পারি এটা নিশ্চিত করার জন্য। সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞান অনুযায়ী আপাতত এইটুকু শুধু বুঝতে পেরেছি যে ক্রিকেটের সাথে কিছুটা সামঞ্জস্য আছে, এইখানেও রান হয় - তবে সেটা কালেভদ্রে হয়। এক খেলায় এক টিমের ১০-১৫ রান হওয়া মানে বিশাল ব্যাপার।



ফেরার পথে "লাইট-রেইল" স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাস্তার পাশে কয়েকটা ছেলের 'স্ট্রিট পারফর্মেন্স' (বাদ্য বাজানো) দেখলাম। লোকজন পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক-দুইটা টাকা দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে স্ট্রিট পারফর্মেন্স্‌ বলতে মানসম্মত যা দেখেছি সেটা প্রায় এক যুগ আগে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট-গামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণে'র সময় এক লোকের দোতারা বাজানো। আশ্চর্য বিষয় হল, একদিন মাত্র শোনা সেই দোতারার সুর আমার কানের পর্দা থেকে এখনও মুছে যায় নাই। আজকের এই স্ট্রিট পারফর্মেন্স্‌ এর সুর হয়তো মুছে যেতো, তাই ভিডিও করে আনলাম।

[দ্বীনি-পরহেজগার ভাইয়েরা ভিডিওটা না দেখলেই ভালো হয়। (এই কথা শুনে আবার যেসব দুষ্টু ছেলে "দ্বিগুণ আগ্রহে" ভিডিওটা দেখতে যাবে তারাও অবশ্য আশাহত হবে) ]

এই লেখা ফেসবুকে এই পোস্ট থেকে হুবহু কপি করা। ছবি এবং ভিডিও ফেসবুকে'র পোস্টে পাওয়া যাবে।

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

লাস ভেগাস - ঝটিকা সফর

ঈদ*, Weekend এবং Labor Day মিলিয়ে মোটামুটি তিনদিনের ছুটি ছিল এই সময়। Arizona-তে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী সঙ্ঘ (BSA)-এর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসিব ভাই এবং ফার্স্ট লেডি নাঈমী আপু'র বাসায় ঈদের রাতে এক অনানুষ্ঠানিক মিলনমেলায় কয়েকজন মিলে হুট করে এই ট্যুরটা'র পরিকল্পনা করা হয়। পরদিন ০২ সেপ্টেম্বর দুপুরে দুইটা গাড়িতে চড়ে আমরা দশজন ভ্রমণ-পিয়াসি যাত্রি রওয়ানা দিলাম পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য নেভাডায় অবস্থিত লাস্‌-ভেগাস-এর উদ্দেশ্যে...।

( *আসলে ঈদের দিন ছুটি ছিল না আমাদের কারোই, তবে ভ্রমণে বের হওয়া আকাঙ্ক্ষা জোরালো হয়েছিলো ঈদে'র আনন্দের প্রভাবে। তবে আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ছিল "প্রেসিডেন্ট-কুমার" রুদ্র। সে সেদিন সন্ধ্যা থেকে "ভেগাস যাবো", "ভেগাস যাবো" বলে সারাক্ষণ আবদার চালিয়ে যাওয়ার কারণে সেটা আমাদের উপর প্রভাব ফেলে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। শেষ পর্যন্ত 'প্রেসিডেন্ট-তনয়' নিজেই অবশ্য যেতে পারে নাই - সেটা ভিন্ন ইতিহাস ...)

এরিজোনা'র ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশের প্রশংসা করতে করতে এবং অনাবৃষ্টিকে দোষ দিতে দিতে আমরা ভালই এগুচ্ছিলাম ৯৩ নম্বর হাইওয়ে ধরে ভেগাস-এর উদ্দেশ্যে। হঠাত্‌ আকাশ কালো করে শুরু হলো ধূলিঝড় এবং বৃষ্টি। বাতাসের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে এর মাঝে আমাদের গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছিলো, কিছুক্ষণ রাস্তা'র পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়েছিলো। এর মধ্যে পুব আকাশে আবার হেসে উঠলো প্রচণ্ড উজ্জ্বল রংধনু। আমি জীবনে এতো উজ্জ্বল রংধনু এই প্রথম দেখলাম। পুরোটা পথ আমরা উপভোগ করলাম আকাশে, পাহাড়ে এবং উপত্যাকাগুলোতে সূর্যের আলোর বৈচিত্র্যময় কারুকার্য।



ভেগাসে পৌঁছাতে সন্ধ্যা আটটা'র মতো বেজে গেলো। "Super-8" হোটেল-টা শহর থেকে কিছুটা দূরে - Nellis Air Force Base​ -এর কাছে। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমরা আবার তাড়াতাড়ি বের হয়ে পড়লাম ভেগাস-স্ট্রিপ এর উদ্দেশ্যে - যেটা দেখা'র উদ্দেশ্যে এই ভ্রমণ। এইবার আর নিজেদের আনা গাড়ি নিয়ে যাই নাই, ভেগাস্‌-স্ট্রিপে পার্কিং নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার আশঙ্কায়। 'Uber'-এর মাধ্যমে দুইটা গাড়ি ভাড়া করে সেখানে গেলাম।


Las Vegas Strip​ পুরাটাই হোটেল এবং ক্যাসিনো-ময়। অত্যন্ত আলোকোজ্জ্বল শহর। মানুষজন এইখানে মূলত অবকাশযাপন করতেই আসে। এখানে দেখার মতো জায়গা বলতে এইসব হোটেল এবং ক্যাসিনো'র জৌলুশ-পূর্ণ সাজ-সজ্জা। এছাড়া উপভোগ করার মতো আরও অনেক কিছুই আসলে ছিল, কিন্তু সেগুলা'র অধিকাংশই হয় আমাদের রুচির বিপরীত এবং/অথবা সাধ্যে'র বাইরে। ইচ্ছা এবং সাধ্য থাকলে এইখানে টাকা উড়ানোর ভালই বন্দোবস্ত আছে (বিশেষত জুয়া খেলা'র জন্য বিশ্ববিখ্যাত এই Las Vegas)।

সেই রাতে আমরা মূলত ভেগাস-স্ট্রিপে হাঁটাহাঁটি করলাম আর শহরের আলকসজ্জ্বা উপভোগ করলাম। Bellagio Casino Hotel​ এর সামনে Water Show টা বেশ সুন্দর লেগেছে।

এছাড়া খুব দারুণ লেগেছে The Venetian Las Vegas​. এটা Italy'র ভেনিস নগরীর আদলে তৈরি করা হয়েছে - কৃত্রিম নদী, নদীতে-নৌকা এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল কৃত্রিমভাবে তৈরি করা আকাশ। আমরা রাত ০১-টা'র দিকে সেখানে গিয়ে হালকা মেঘযুক্ত নীল আকাশ দেখে প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম।



পরদিন সকালে আবার গেলাম ভেগাস-স্ট্রিপ দিনের বেলায় কেমন দেখায় সেটা দেখার জন্য। দিনে'র বেলায় কৃত্রিম আলো'র পরিবর্তে সূর্যের আলোয় শহরটা আমার ভালই লেগেছে। নিউ ইউর্ক, মস্কো, ভেনিস, মিশর এইরকম পৃথিবী-বিখ্যাত বিভিন্ন শহরের বৈশিষ্ট্য-সম্বলিত ডিজাইনের মাধ্যমে এইখানকার হোটেল/রিসোর্ট-গুলো তৈরি করা হয়েছে। ভেনিসিয়া'র কথা তো বললাম উপড়ে, এছাড়া আছে পিরামিড এবং ফারাও-এর মাথা দিয়ে সাজানো Luxor Hotel, স্ট্যাচু অব লিবার্টি এবং উঁচু-উঁচু বিল্ডিং সম্বলিত নিউ ইউর্ক।




ফেরার পথে Hoover Dam​ দেখতে গেলাম। পাহাড়ি এলাকা; কলোরাডো নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেখানে। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। তবে দুপুরের কড়া রোদে'র কারণে গাড়ি'র বাইরে বের হয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না - তাছাড়া আমাদের হাতে সময় কম ছিল বিধায় আমরা দ্রুত এলাকাটা দেখে নিলাম। সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে Mead Lake Overlook। ওখানে পাহাড়ের চূড়া থেকে বিশাল Lake Mead​ দেখা যায়।


With:
Sameena Hossain​ , আয়ান, Ai Michael​, Shazia Zerin​, Nabia Akter Tusty​,  Shammo Shanando Saha​, Sheikh Minhaj Hossain​ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি।

এঁদের মধ্যে সাম্য, তুষ্টি এবং সেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দম্পতি এর আগেও কয়েকবার লাস-ভেগাস এ গিয়েছিলো। শুধুমাত্র আমাদেরকে ঘুরিয়ে আনার জন্য সেখানে (৬ ঘণ্টা ড্রাইভিং দূরত্বে) আবার গিয়েছে। এইজন্য তাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ আমি।।

এই লেখা মূলত ফেসবুকে ভেগাস-ট্রিপের পর আপলোড করা ছবি'র এলবামের বিবরণ

রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে আবেদন - গুরুত্বপূর্ণ ধাপসমূহ

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা'র জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় জরুরী, তার মধ্যে GRE, TOEFL, SoP, LoR এবং Professor-দের ইমেইল করা এইগুলা সবচেয়ে অগ্রণী। আমি এই পোস্টে এইগুলা নিয়েই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করলাম।

GRE

যুক্তরাষ্ট্রে'র অধিকাংশ ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট লেভেলের প্রোগ্রামে (মাস্টার্স/ পিএইচডি-তে) ভর্তি'র জন্য GRE দেয়াটা জরুরী। এটাকে কেউ একটা অতিরিক্ত ঝামেলা হিসেবে গণ্য করেন, আবার কেউ কেউ এটা-কেই একটা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন।
যাদের undergrad-এ (এবং মাস্টার্স করা থাকলে সেখানেও) ভালো CGPA এবং/অথবা ভালো কিছু পাবলিকেশন আছে, তাঁদের জন্য GRE'র স্কোর-টা মূলত একটা ভর্তি'র যোগ্যতা পূরণ করা, সেক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয় যে ন্যূনতম স্কোর নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটা পেলেই চলে। এছাড়া তাঁরা চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশেও ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন (GRE না দিয়েই)। কিন্তু যাদের ভালো রেজাল্ট কিংবা পাবলিকেশন নাই, তাঁদের জন্য GRE-তে উঁচু স্কোর পেয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণের একটা সুযোগ রয়েছে। (শুধু যুক্ত্ররাষ্ট্রই নয়, আরও কিছু দেশের ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় GRE'র স্কোর -এর মূল্যায়ন করে থাকে।) GRE'র স্কোর এর উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে'র কোন্‌ সারির বিশ্ববিদ্যালয়-গুলাতে আবেদন করা যাবে সেটা'রও একটা পরিকল্পনা করা যায়। তাই GRE দেয়াটাকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা'র পথে প্রথম ধাপ হিসেবে গণ্য করা যায়।
GRE’র প্রস্তুতি নিয়ে এইখানে কিছু কথাবার্তা লিখেছিলাম। ওইটা দেখলে ভালো হয়। এইখানে আর আলাদাভাবে লিখলাম না।

TOEFL

টোফেল এর স্কোর-টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় টোফেল এর স্কোরের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় কোন একজন ছাত্রকে Teaching Assistant-ship দিবে কি দিবে না। অনেক বিশ্বিবিদ্যালয়ে আবেদন করার ন্যুনতম যোগ্যতার মধ্যেও টোফেলের একটা নির্দিষ্ট স্কোর উল্লেখ করা থাকে।
টোফেল যেহেতু পুরাপুরি-ই ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা যাচাই করার পরীক্ষা, সেহেতু, ইংরেজি-তে যে যতো ভালো তার জন্য এইটাতে ভালো করার সুযোগ ততো বেশি। একটা ভাষায় রাতারাতি দক্ষ হয়ে উঠা কঠিন। তবে, TOEFL -জাতীয় এইসব পরীক্ষার সুবিধা হচ্ছে, এরা সবসময় একটা নির্দিষ্ট ফরম্যাটেই পরীক্ষা নিবে। তাই পরীক্ষা'র ফরম্যাট-টা খুব ভালো ভাবে জানলে এবং সেই অনুযায়ী কিছুদিন অনুশীলন করলে এই পরীক্ষায় বেশ ভালো করা সম্ভব। Format জানার জন্য NoteFull -এর ভিডিও গুলা দেখাই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।
এছাড়া ETS* এর লোকজনের দ্বারা নির্মিত একটা কোর্স edX -এ আছে যাতে এই পরীক্ষা'র ফরম্যাট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
GRE'র প্রস্তুতি নেয়ার পর টোফেলের Reading & Writing -নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কারণ নাই। আর হলিউডের সিনেমা এবং TVSeries -দেখার অভ্যাস থাকলে, Listening -এও তেমন দুশ্চিন্তার কারণ নাই। তবে ভালো হয়, অনলাইনে নিয়মিত জটিল জটিল বিষয়ের উপর কিছু Radio-প্রোগ্রাম অথবা Podcast -শুনতে পারলে। আর TOEFL TPO নামে একটা Mock Test software পাওয়া যায়। ওইটা কারও কাছ থেকে জোগাড় করে কিছু Mock Test দিতে পারলে ভালো হয়।
TOEFL -এর সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো Speaking। এই অংশে ভাল করতে হলে কঠিন অনুশীলন দরকার (যদি না ইংরেজিতে আগে থেকেই নিয়মিত কথাবার্তা বলার অভ্যাস থাকে)। বন্ধু/ফ্যামিলি মেম্বারদের কারও সাথে কয়েকদিন নিয়মিত কথা বলার ব্যাবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। আর ৪৫/৬০ সেকেন্ডের মধ্যে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নিজের ইংরেজিতে বলা কথাবার্তা রেকর্ড করে শুনলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

GRE এবং TOEFL উভয় পরীক্ষাEducational Testing Service (ETS)-নামক একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে।

TOEFL না দিয়ে IELTS ও দেয়া যায়। সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলা ইংরেজি-তে দক্ষতার দলিল হিসেবে গ্রহণ করে। IELTS -সম্পর্কে Facebook-এর HSA-BD group-এ (Files সেকশনে) বেশ কিছু ভালো ভালো লেখা আছে, সেগুলা দেখা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় / প্রফেসর খোঁজা

GRE এবং TOEFL দেয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নিজের এযাবৎ অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতা + GRE-score + TOEFL-score এসবের উপর ভিত্তি করে  কোন্‌ কোন্‌ বিশ্বিবদ্যালয়ে আবেদন করলে ভালো হবে তার একটা ছোটখাটো লিস্ট তৈরি করা। কিন্তু এই ছোটখাটো লিস্ট-টা বানানোর আগে একটা বড় লিস্ট বানাতে হবে যেখানে সম্ভাব্য সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের
Website address
ভর্তি'র requirements,
আবেদনের নিয়মাবলী,
ভর্তি'র আবেদন ফী,
হার্ড কপি ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠাতে হবে কিনা,
আন্তর্জাতিক কোন প্রতিষ্ঠানে'র মাধ্যমে ট্রান্সক্রিপ্ট evaluate করাতে হবে কিনা,
faculty list page এবং
সেখানকার পছন্দসই faculty-দের বর্ণনা
-এইসব থাকবে।

ফ্যাকাল্টি-দের বর্ণনা বলতে
তাঁদের নাম
তাঁদের ল্যাবের/রিসার্চ গ্রুপের ওয়েব এড্রেস,
তাঁরা কী-কী বিষয় নিয়ে কাজ করেন,
তাঁরা তাঁদের ল্যাবে সামনের সেশনে ছাত্র নিবেন এমন কোন ঘোষণা দিয়ে থাকলে সেটা’র আদ্যোপান্ত,
তাঁরা মেইল দিতে নিষেধ করে রেখেছেন কিনা; কিংবা আগে আবেদন করে তারপর মেইল দিতে বলেছেন কিনা,
তাঁদেরকে মেইল কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাটে দিতে হবে এমন কথা কোথাও লিখে রেখেছেন-কিনা,
তাঁদেরকে মেইল দেয়ার পর মেইলে'র জবাব পেয়ে থাকলে সেটা এবং এর ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয়া দরকার
-এইসব।
এই কাজটা পুরাটাই করতে হবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে’র ওয়েবসাইট ঘেঁটে ঘেঁটে। এছাড়া ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত কেউ থাকলে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া খোঁজখবরের ভিত্তিতেও কিছু তথ্য এই লিস্টে সংযোজন করা যায়। আর HSA-গ্রুপে পূর্ববর্তী বছরের Acceptance List-গুলা দেখলে একটা সাধারণ ধারণা পাওয়া যাবে কোন্‌ ধরণের প্রোফাইলের ছাত্র কোন্‌ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি'র সুযোগ পায়।
আমি এই লিস্ট-টা বানিয়েছিলাম। এরকম একটা লিস্ট   US News & World Report - এর র‍্যাঙ্কিং থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখে ওগুলার ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রফেসরদের প্রোফাইল ঘেঁটে বানাতে হবে। বেশ পরিশ্রম সাধ্য কাজ।
প্রফেসরদের মেইলের জবাব পাওয়া / না-পাওয়া'র উপর ভিত্তি করে এই বড় লিস্ট থেকে ১০-১৫ -টা বিশ্ববিদ্যালয়ে'র একটা ছোট লিস্ট বানাতে হবে এবং সেগুলাতে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নিজের প্রোফাইল অনুযায়ী কিছু সামনে'র সারির, কিছু মাঝে'র সারি'র এবং কিছু পিছনে'র সারি'র বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা উচিত।
তবে এসব করার আগে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো GRE'র জন্য প্রস্তুতি নেয়া। সেটা শেষ হলে তারপর এই 'গবেষনা' শুরু করলে ভালো হয়।
অবশ্য যদি নিজের প্রোফাইল ভালো হয় (সিজিপিএ উঁচু, কিছু পাবলিকেশন আছে এইরকম হলে) জি আর ই দেয়ার আগেই প্রফেসরদেরকে নক করা যায়। মূলকথা প্রফেসরদেরকে নক করে নিজের সম্পর্কে কিছু বলার থাকতে হবে। মেইল করে যদি শুধু বলি "আপনার কাজ আমার খুব ভাল্লাগছে, আমারে আপনার ল্যাবে নেন", তাহলেই তিনি খুশিতে গদগদ হয়ে আমাকে নিয়ে নিবেন এমন-টা হওয়ার কথা না।

Statement of Purpose

SOP -এমন ভাবে লিখা উচিত যেন নিজের গবেষণা করার আগ্রহ তাতে ফুটে উঠে, (নির্দিষ্ট কোনো একটা/দুইটা বিষয়ে আগ্রহ দেখানো-টা ভালো) এবং সেই বিষয়ে গবেষণা করার ক্ষেত্রে আবেদনকারী'র প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্জিত কিংবা ব্যাক্তিগত-ভাবে অর্জিত শিক্ষাগত দক্ষতা,  পূর্ব-অভিজ্ঞতা, Extra curricular activities, কিংবা অন্যান্য গুণাবলী কীভাবে পরিকল্পিত গবেষণা-কর্মে সহায়তা করবে সেটাও যদ্দুর সম্ভব উল্লেখ করা দরকার। এছাড়া আমি কেন গবেষণামূলক কাজ করতে চাই - আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী - এইটাও অল্প কথায় বুঝিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়। আর দুনিয়াতে এতো বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্বেও ঠিক এই বিশ্ববিদ্যালয়েই আমি কেন আবেদন করছি সেটাও লিখা উচিত অল্প কথায়।
আমি প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা SOP বানিয়েছিলাম। তবে সবগুলাই প্রায় একই - শুধুমাত্র শেষের প্যারাগ্রাফ-টা প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা-ভাবে লিখেছিলাম।
SOP Writing Tips:

Resume/CV লিখা

অনেক প্রফেসর CV/Resume দেখতে চান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়ও একটা Resume upload-করার ব্যাবস্থা থাকে। অতএব নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মবৃত্তান্ত-সহ এক-দুই পাতা'র একটা Resume লিখে ফেলা দরকার (এর চেয়ে লম্বা না হলেই ভালো)।  খুব বিস্তারিত লিখার দরকার নাই। এছাড়া Academic Resume-তে নিজের বংশপরিচয়, ফটোগ্রাফ এইসব দিয়ে Resume-কে Bio-Data বানিয়ে ফেলারও কোন মানে হয় না। Resume-তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে নিজের গবেষণা কর্ম (যদি কিছু থাকে), কিংবা আকাঙ্ক্ষিত গবেষণার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত নিজের আগের কোন প্রোজেক্ট/চাকরি'র অভিজ্ঞতা এইসব।

Emailing Professors

SOP -এর মতো ইমেইলেরও নিজস্ব একটা ফরম্যাট বানিয়ে ফেলতে হবে। তবে একজন নির্দিষ্ট প্রফেসরকে ইমেইল পাঠানোর পূর্বে, তাঁর গবেষণা সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিত -এবং সে অনুযায়ী মূল ইমেইল ফরম্যাট-টাতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে নেয়া উচিত। ইমেইল পাঠানোর পূর্বে অবশ্যই প্রফেসর-কে ঠিক নামে সম্বোধন করা হচ্ছে কি-না, কাঙ্ক্ষিত প্রফেসরের ইমেইল-এড্রেসেই মেইল পাঠানো হচ্ছে কি-না সেটা নিশ্চিত করে নেয়া দরকার। (আমি একজন প্রফেসরকে একবার ভুল নামে সম্বোধন করে মেইল করে ফেলেছিলাম, পরে অবশ্য সাথে সাথেই আবার একটা মেইল দিয়ে ভুল সংশোধন করেছি) যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেসরদেরকে বাংলাদেশ সময় রাত ৯-টা থেকে ১০ টা এর মধ্যে মেইল করা উচিত। যে বছরের Fall session -আবেদন করতে ইচ্ছুক, তার আগের বছরের সেপ্টেম্বর অক্টোবর থেকে প্রফেসরদেরকে নক করা শুরু করলে ভালো হয়। একবার মেইল করে জবাব না পেলে, কিছুদিন পর দ্বিতীয়বার মেইল করা যায়। তবে এর বেশি মেইল না করাই ভালো।
Some Email Writing Tips:


Collecting (Writing!) LORs

রিকো আসলে নিজেকেই লিখতে হবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। স্যারদের আসলে এতো সময় নাই যে তোমার জন্য তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে পুরা রিকো লিখে দিবেন (যদি না তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ড-মেডালিস্ট/অনন্যসাধারণ কোন ছাত্র হয়ে থাকো)।​ তবে স্যারদের নির্দিষ্ট কিছু রিকো ফরম্যাট করা থাকে অনেক সময়। যেমন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আমাকে রিকো স্যাম্পল দিয়েছিলেন, আমি সেইটার আদলে নিজের জন্য একটা লিখে উনাকে পাঠিয়েছিলাম।
তিনজন শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া তিনটা রিকো সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে -- রচনাভঙ্গি, ছাত্রের গুণাবলী'র বর্ণনা -এইসব। এক-এক জন শিক্ষক এক এক বিষয়ে তোমার গুণগাণ গাইবেন - কেউ বলবেন এই ছেলে প্রোগ্রামিং-এ তুখোড়, কেউ বলবেন - এই ছাত্র এক্স-ট্রা কারিকুলামে ভালো এবং খুবই কর্মঠ, আবার আরেকজন বলবেন - এই ছাত্র খুবই মেধাবী, ক্লাসে খুবই রেসপন্সিভ -- ইত্যাদি।
Some Reco-writing Tips:

নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন সম্পন্ন করা

প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সেই সময়ের মধ্যে আবেদন করা উচিত। পারলে তারও আগে আবেদন করে ফেলা উচিত। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে আবেদন যাচাই করা শুরু করে দেয় (Deadline -এর আগেই)।
আবেদন অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই অনলাইনে নিয়ে থাকে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট-এর হার্ড কপি চায়। সেটা আবেদনের সময়সীমা'র মধ্যে যাতে পৌঁছায়, সেজন্য বেশ কিছুদিন সময় হাতে রেখে পাঠানো উচিত। বাংলাদেশ থেকে ডাক বিভাগের EMS service -টা এই জন্য ব্যাবহার করা যায় -- বেশ সস্তা -- তবে দশ পনের দিন সময় লাগতে পারে পৌঁছাতে। এছাড়া, Desh Courier, DHL -এইসব তো আছেই।
Fall Semester -এ ভর্তি'র জন্য অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় আগের বছরের ডিসেম্বরে কিংবা সে বছরের জানুয়ারি'র মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে বলে। কিছু কিছু বিশ্বিবিদ্যালয় আরও পরে আবেদন নেয় (মে মাস পর্যন্ত-ও আবেদন নিতে দেখেছি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে)।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যলয়গুলাতে আবেদন প্রক্রিয়ার এই প্রতিটা বিষয়েই ফেসবুকে'র HigherStudyAbroad Group -এ অনেক রিসোর্স পাওয়া যাবে (ফাইল সেকশনে)। এছাড়া কোন একটা বিষয়ে সমস্যায় পড়লে/কিছু জানার থাকলে ওই গ্রুপে পোস্ট দিলে কেউ না কেউ সাহায্য করবে বলে আশা রাখা যায়।
(এই লেখায় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ গিয়ে থাকলে কমেন্টে উল্লেখ করলে ভাল হয়)