রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮

কনা সফ্‌ট্‌ওয়্যার ল্যাবে টিটি খেলার স্মৃতি

কনা সফটওয়ার ল্যাবের সুদিন এসেছে।

সেকালে শুধু দুইবেলা দুই-দান টেবিল টেনিস খেলার আশায় সারাদিন অফিসে গতর খাটতে যেতাম আমরা।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনেক খেলোয়াড় থাকলেও আমাদের ছিল না কোন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাট, বল, এবং সর্বোপরি কোন য্যুতসই টেবিল। ব্যাটের চামড়া না থাকা-টা অবশ্য তেমন মারাত্মক কোন বিষয় না — ( সেটা এখন বুঝি ) উন্নত দেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ-টাকা খরচ করা জিম-এ ও টিটি খেলতে গেলে দুইটা ছাল-ছাড়া ‘প্যাডেল’ ধরিয়ে দেয়। আর বল নিয়েও কনা সফটওয়্যারের পোলাপানের তেমন কোন অভিযোগ ছিল বলে মনে পড়ে না …। তাদের খেলার প্রতি ভালোবাসা এতোই প্রবল যে সম্ভব হলে নিজের প্যান্টের ছেঁড়া পকেটে হাত ঢুকিয়ে বল বের করে সেটা দিয়েই খেলা শুরু করে দিতে চায়। আর নেট এর কাজ টেবিলের মাঝখানে টিস্যু বাক্স পেতে রেখে ভালই চালানো যায় … বল আটকানো দিয়ে কথা…।

কিন্তু টেবিল ছাড়া খেলা হবে কীভাবে?
তাতে কী, “কে এস এল”-এর ছেলেপেলে তো থেমে থাকার পাত্র না।
এর পরের ঘটনা শুধুই ইতিহাস…
কনা সফটওয়্যার এর ছেলেপেলেদের “দুটি ‘টি’ টেবিল জোড়া লাগিয়ে ‘টি-টি’ টেবিল” বানানোর ঘটনা সেসময়ের “কনামাধ্যমে” মুখ্য সংবাদ হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল।

যাই হোক, শুনলাম, কনা সফ্‌টওয়ারের অফিসে অ-স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টি টি টেবিল এসেছে … সেই সাথে এসেছে কোনপ্রকার ‘ভেজাল’বিহীন জাল (Net)।

“কনা এস এল” এ টি টি টেবিল এর আগমনে পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তন কর্মীদের ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি এবং চোখের কোনায় এক ফোটা পানি আসলেও আসতে পারে।

………...................................


আমি খেয়াল করে দেখেছি পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা ঠাট্টা-কৌতুক বোঝেন না…। তাঁদের উদ্দেশ্যে নিচের কথাগুলা লেখাঃ

এই লেখা কনা পরিবারের প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে লিখা। এবং এটা একটা রম্য লেখা (আপনি হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল না_ও করে থাকতে পারেন)।
কনা সফ্‌ট্‌ওয়্যার ল্যাব বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিশ্রমী সফ্‌ট্‌ওয়্যার কোম্পানি’র একটা। আমার লেখায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও কোনভাবে কনা সফ্‌ট্‌ওয়্যারের প্রতি কোন প্রকার নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

(এই লেখা ফেসবুক পোস্ট করা হয়েছিলো)

শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১৮

শাহীনের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা


স্কুলে পড়ালেখায় ফাঁকি দেয়ার উপায় আমার কখনো ছিল না, কারণ 'পড়ালেখা' নামক সোনার হরিণ নিজেই সমস্ত স্কুলজীবন আমাকে ফাঁকি দিয়ে বেড়িয়েছে, কখনো ধরা দেয়নি। তাই আমার নিজ থেকে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে তেমন কিছু করতে হয়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় ফাঁকি দিতে না পারলেও, প্রাতিষ্ঠানিক খেলাধুলায় ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সাফল্যের দাবিদার আমি। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে।

তখন সম্ভবত চতূর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে তখন শাহীনে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মৌসুম-টা বেশ আনন্দের ছিল। এমনিতেই উৎসবমুখর পরিবেশ, মেলা মেলা একটা ভাব।  খেলা হতো ষোল কোয়ার্টারের মাঠে। আমরা ছাত্রছাত্রী সবাই সকালবেলা স্কুল থেকে একে অপরের পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে হেঁটে হেঁটে মাঠে যেতাম।
স্কুলের সবার সাথেই দেখা হচ্ছে, কিন্তু কোন পড়ালেখা করতে হচ্ছে না, এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে?

মাঠে যাওয়া ব্যাপারে আমার আগ্রহ যতোটা ছিল, খেলায় অংশগ্রহণের আগ্রহ ততোটা ছিল না। খেলাধুলায় তেমন পারদর্শী না হওয়াটা এর মূল কারণ না, মূল কারণ ছিল আশেপাশের কাঠবাদাম, বড়ই, আম, জাম, তেঁতুল, জলপাই এই সমস্ত ফলের গাছ। (আমি জীবনে প্রথমপুতিজামখেয়েছি সেই ষোল কোয়ার্টারে মাঠে যাওয়ার পথের এক গাছে) খেলার মৌসুমে এইসব গাছের অধিকাংশই ফলে ভর্তি থাকারফলশ্রুতিতে আমাদের স্কুলের খাকি প্যান্টের পকেটও রঞ্জিত থাকতো বিভিন্ন ফলের রস এবং কষ -এ।
তাছাড়া শিক্ষকদের চোখ এড়িয়ে মাঠ থেকে পালিয়ে কিছুদূর গেলেই ভাঙ্গা বিমান এবং হেলিকপ্টারের একটাজাংকইয়ার্ড সেখানে গিয়ে উড়োজাহাজের নষ্ট যন্ত্রপাতি কুরানোর চেয়ে আকর্ষণীয় কোন কাজ সেসময় মাথায় আসতো না।

একদিন মাঠে খেলাধুলা চলছে, আর ওদিকে আমি দৈনন্দিন অভ্যাসমতো খালপাড়ে পিঁপড়ার কামড় অগ্রাহ্য করে একটা কাঠবাদাম গাছের ডালে ঠ্যাং দুলিয়ে কাঠবাদাম চিবুচ্ছি। হঠাৎ স্কুলের স্টাফ ইদ্রিস ভাই গাছের গোড়ায় এসে আমাকে নিচে নামতে বললেন। নামার পর বললেন মাঠের অপর প্রান্তে কোন এক ম্যাডাম ডেকে পাঠিয়েছেন। আমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল, আজকে না জানি কী আছেপিঠে সারাবছর ক্লাসে শাস্তি পাই পড়ালেখা পারি না সে কারণে -  সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু খেলার মাঠে এসেও শাস্তি পেলে সেটা তো ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। 
সম্ভবত নাসরিন বানু ম্যাডাম এবং রওশন আরা ম্যাডাম ডেকেছিলেন। কাছে ডেকে কোনরকম বকাঝকা না করে বুঝিয়ে বললেন, গাছে চড়া বিপদজনক; আর যে ছেলের গাছে চড়ার পারদর্শিতা আছে সে চাইলে খেলাধুলায় ভালো করতে পারবেএইরকম কিছু একটা। আমি খুবই অনুপ্রাণিত হলাম। খেলাধুলায় মনোযোগী হলাম। সে বছর সে মাঠে কোন পুরষ্কার ভাগ্যে না জুটলেও এক দুই বছর পর (ষষ্ঠ শ্রেণি-তে) ‘মাঠান্তরে’ (আর টি এস এর মাঠে) খেলাধুলায় কিছু পুরষ্কার পেয়েছিলাম। (সেটা অবশ্য নতুন মাঠের পাশে ফলের গাছের বদলে ঝাউ-গাছ থাকার কুফলও হতে পারে।)

ষষ্ঠ শ্রেনি সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সপ্তম শ্রেণিতে আবার খেলাধুলায় নাম দিলাম। সেবার আমার একক প্রচেষ্টায় চার গুণিতক-১০০ মিটার রিলে দৌড় প্রতিযোগিতায় আমাদের দল দ্বিতীয় স্থান লাভ করেবলাই বাহুল্য, প্রথম স্থান লাভ করার কথা ছিলআমি সময়মত 'রিলে-ব্যাটন' আমাদের ফার্স্ট-বয় ওসমানের হাতে পৌঁছাতে পারিনি বিধায় দ্বিতীয়-স্থান জোটে।

সেটাই মূলত আমার সংক্ষিপ্ত 'খেলোয়ারজীবনের' পরিসমাপ্তি।

এই লেখা ফেসবুকের এই পোস্ট এর হুবহু অনুলিপি