সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮

'সামার'


সে রাতে ঘুমাতে গিয়ে গুরু’র সাথে সাক্ষাৎ (অবশ্যই স্বপ্নে)।
গুরুমশাই বললেনঃ কিরে বৎস কেমন আছিস?
আমি বললাম, গুরুজী, দিনকাল চলে যাচ্ছে কোনরকম।
গুরুজিঃ এরিজোনায় কী করিস?
আমিঃ উচ্চশিক্ষার্থে এসেছি গুরু, তবে আপনার মতোই অবস্থা, পড়ালেখায় মন নাই। দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে, সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করতে ইচ্ছা করে।
গুরুজিঃ লক্ষণ তো ভালো না। আমি নাহয় জমিদার বংশের লোক ছিলাম, এইসব করে পার পেয়ে গিয়েছি; তোর তো কিছুই নাই, এইসব খামখেয়ালি করে পরে বিপদে পড়বি। পড়াশুনায় মন দে। আর পাশাপাশি একটু আধটু লেখালেখি চালিয়ে যা।
আমিঃ অবশ্যই, গুরুজি। আপনার উপদেশ শিরোধার্য।
গুরুজিঃ তুই যেহেতু এরিজোনায় আছিস, গ্রীষ্মকাল, মরুভূমি এইসব নিয়ে লিখতে পারিস। আষাঢ়, বৃষ্টি-বাদল, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি এইসব নিয়ে আমি তো অনেক লিখেছি, গ্রীষ্ম নিয়ে খুব একটা লেখা হয়নি।
আমিঃ লিখেছেন তো মনে হয় কিছু। এই মুহুর্তে বিরহ কবিতাটা’র এই লাইনগুলো মনে পড়ছেঃ
“তুমি যখন চলে গেলে
          তখন দুই - পহর—
সূর্য তখন মাঝ - গগনে,
           রৌদ্র খরতর।”
গুরুজিঃ আরে, ওটা তো গ্রীষ্ম নিয়ে লেখা না…।
আমিঃ তা অবশ্য ঠিক,  তবে ভালো ভাবে আপনার রচনাবলী খুঁজে দেখলে হয়ত আরও কিছু পাবো।
গুরুজিঃ হ্যাঁ খুঁজে দেখতে পারিস।
আমিঃ একটা কাজ অবশ্য করা যায়, আপনার ‘আষাঢ়’ কবিতাটা’র আদলে গ্রীষ্মকাল নিয়ে একটা ‘উত্তরাধুনিক’ প্যারডি লিখতে পারি, যদি আপনার অনুমতি পাই … ।
গুরুজিঃ লিখে ফেল। এতে আবার এতো অনুমতি চাইবার কী আছে।

এরপর ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠেই লিখে ফেললাম এই ‘প্যারবি’।

-------------------------------------

‘সামার’

নীল নবঘনে ‘সামার’-গগনে কোনো মেঘ আজ নাহি রে,
ওরে, আজ পোড়া যাস্‌নে ঘরের বাহিরে।
তপনের তাপ আজি বড় খর,
তপ্ত ধরাতে জান মরমর,
শানিত কিরণে চক্ষু মেলিয়া কোন সাহসে আমি চাহিরে।
ওরে, আজ পোড়া যাস্‌নে ঘরের বাহিরে।

রৌদ্রে পুড়িয়া, ঘর্মে ভিজিয়া ভুত-সদৃশ সাজি রে।
উত্তাপে হলো ঘিলু-মস্তক ভাজি রে।
বহিছে লূ-হাওয়া ভুবন জুড়িয়া
দাবদাহে যায় চর্ম পুড়িয়া,
এহেন গরমে লাগেনা তো ভালো করিতে কোন কাজই রে।
উত্তাপে হলো ঘিলু-মস্তক ভাজি রে।

পিচ-‘গলা’ এই পথটারে মোরা কেউ কভু ভালোবাসি নাই,
দেখ, আজ কারোও মুখে হাসি নাই।
যেদিকে তাকাই দেখি মরু ধু ধু
বিধাতার কাছে প্রার্থনা শুধু
বসন্ত-প্রাতে অনুভূত সেই বায়ু যেন বারো মাসই পাই।
দেখ, আজ কারও মুখে হাসি নাই।

সূর্য দেবতা জ্বলিছে গগনে দেখো ওই ‘ফুল-ব্রাইট’-এ।
ওরে, আজ তোরা যাস্‌নে রে ‘সান-লাইট’-এ।
চামড়া পুড়ায়ে কী লাভ হবে?
রবিরে ডরায়ে র’বি ঘরে সবে।
‘শ’কুড়ি উঠিল তাপমাত্রা আজকে ‘ফারেনহাইটে’,
ওরে, আজ তোরা যাস্‌নে রে ‘সান-লাইট’-এ।

-------------------------------------

তারিক মোঃ নাসিম
এরিজোনা
২২ জৈষ্ঠ্য, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ।

#প্যারবি
#তারিক_নাসিম

(এই লেখা ফেসবুকে'র 'পেন্সিল' নামক গ্রুপে প্রকাশিত হয়েছিল)

স্কুলজীবনের প্রিয় শিক্ষকদের কথা

আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মহিউদ্দিন স্যার, ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন। আমাদের স্কুলে পড়েছে, কিন্তু মহিউদ্দিন স্যারের বেতের/স্কেলের বাড়ি না খেয়ে স্কুল লাইফ পাড় করেছে এমন খুব কম ছাত্রই আছে। স্যারের নিয়মিত ডায়ালগ ছিল, "ওই-ত্তর গুরু" - এটা দিয়ে স্যার আসলে কী বুঝাতে চাইতেন আমি এখনও নিশ্চিত না, সম্ভবত "ওই গরু"। স্যারের ইসলাম শিক্ষা'র নোট পড়ে আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এস এস সি পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে A+ পেয়েছিল।

নবম-দশম শ্রেণীতে সামাজিক বিজ্ঞান পড়াতেন আবু-সাইয়ীদ স্যার। মন মেজাজ একটু খারাপ থাকলে প্রথমে আগেরদিনের পড়া জিজ্ঞেস করতেন, সেক্ষেত্রে অধিকাংশ ছাত্রেরই দুইএকটা স্কেলের বাড়ি খেতে হত, অথবা শাস্তি-স্বরূপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হত। স্যার অনেক গল্প করতেন ক্লাসে। মোটামুটি মুঘল আমল থেকে শুরু করে তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী (ক্লিংটন-লিউনস্কি), ধর্ম, রাজনীতি, বাংলাদেশ, আমেরিকা, তুরস্ক, আফগানিস্তান কোনোকিছুই বাদ যেত না স্যারের একটা ক্লাসের আলোচনায়। শেষ ৫ মিনিটে স্যার বইয়ের এক দুইটা পাতা দ্রুত পড়ে যেতেন, আর বলতেন, এইটুকু বাসায় পড়ে আসতে। স্যারের খুব কমন ডায়ালগ ছিলঃ "এটাই হল বাস্তবতা"।
এছাড়া “পরীক্ষার টেনশনে পড়ালেখা হয় না” - এই কথাও স্যারের মুখেই প্রথম শুনেছিলাম।

কৃষিশিক্ষা'র শিক্ষক আবুল কাশেম স্যার খুব মজার মানুষ ছিলেন। যেহেতু স্কুলে একই নামে আরেকজন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, সেহেতু, উনার নাম হয়ে গেল "কৃষি-কাশেম"। স্যারের ক্লাসে নকল করা খুব সহজ ছিল। আমি খুব বোকাসোকা ছাত্র ছিলাম, তাই নকল করতে পারতাম না (নকল করতেও বুদ্ধি লাগে)। জীবনে যে দুই একবার বড়মাত্রার নকল করেছি সেগুলা কৃষি-শিক্ষা'র 'ক্লাস-টেস্ট'-এ। স্যারের ডায়ালগ ছিলঃ "কান ছাই ধর”।

গণিত পড়াতেন আব্দুস সোবহান ফারুকী স্যার। স্যার আমাদের বইয়ের প্রায় সব অঙ্কই করে দিতেন ক্লাসে। আমাদের নিজেদের মাথা-খাটিয়ে করার আর বেশি কিছু বাকি থাকতো না। আমি গণিতে খুব দুর্বল ছিলাম, এবং স্যার এটা জানতেন। আমি যখন হঠাৎ কোন একটা অঙ্ক মিলিয়ে স্যারকে দেখাতাম, স্যার অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। স্যার সবাইকে গণিত নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করার বিষয়ে নিয়মিত সাবধান করতেন, বলতেনঃ “গণিতের সাগরে সাঁতার দিতে যেও না, পাড়িও দিতে পারবে না, ফিরেও আসতে পারবে না, হাবুডুবু খেয়ে মরতে হবে”।

প্রাইমারী স্কুলে পেয়েছিলাম প্রদীপ স্যারের ক্লাস। স্কুলজীবনে তাঁর মতো মেধাবী এবং মজার মানুষ আর কাউকে পাই নাই। স্যার আমাদের গণিত পড়াতেন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে। কেউ দুষ্টামি করলে বা পড়া না পারলেই বলতেন, “মস্তিষ্ক গুঁড়ো করে দিবো”। মস্তিষ্ক, ভঙ্গুর জিনিস না, থলথলে একটা বস্তু, এটাকে কেন স্যার গুঁড়া করে দিবেন বলতেন জানি না। তবে স্যার কখনো কাউকে পিটাতেন না।

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত (২০০১ SSC - ২০০৩ HSC ব্যাচ) তসলিমা আক্তার ম্যাডামের রসায়ন ক্লাস পেয়েছিলাম। অত্যন্ত যত্ন নিয়ে পড়িয়েছেন আমাদের। ম্যাডাম-কে নিয়ে একটা মজার স্মৃতি মনে পড়লো।আমি কলেজে উঠে স্কুলের চেয়ে আরো বেশ ফাঁকিবাজ হয়ে গেলাম। সেই-সাথে আলসেমি এবং কিপটামি করে বাংলা-ইংরেজি-ম্যাথ-কেমিস্ট্রি-ফিজিক্স এই সব বিষয়ের ক্লাস-নোট নেয়ার জন্য শুধুমাত্র দুই-টা লম্বা খাতা ব্যাবহার করতাম। ওই খাতাগুলায় খুবই ছোট-ছোট অক্ষরে লিখতাম যেন পুরা ইন্টারমিডিয়েট ওই খাতা দুইটা দিয়ে চালিয়ে দেয়া যায় (খুবই ছোটলোকি মানসিকতা -- এখন বুঝতেছি --- পড়াশুনার ব্যাপারে এতো কিপটামি না করলেও চলতো)। একদিন তসলিমা ম্যাডামের চোখে পড়লো আমার সেই মাইক্রোস্কোপিক লেখা। ম্যাডাম বললেনঃ "বাপের টাকাই যদি এতো কিপটামি করে খরচ করো, ভবিষ্যতে নিজের টাকা কীভাবে খরচ করবে?..."


(বি এ এফ শাহীন, চট্টগ্রাম)

-----------------------------------
ফেসবুকে এই  পোস্টে আমার কমেন্ট থেকে নেয়া।

বুধবার, ৩০ মে, ২০১৮

'ত্রিশার্ত' পল্লব

কেবল তো শুরু গুরু, হল মোটে 'থার্টি’,
পাড়ি দিতে হবে আরও বছর হাজারটি।
মেধা ও মননে রবে চিরদিন 'স্মার্ট’-ই,
নাহয় পরলে সদা ঢোলাঢালা 'শার্ট’-ই।

গৃহ জুড়ে আসে যেন শিশু দুই চারটি,
পোলাপান পায় যেন তোমার এ আচার-টি;
যদিও না পায় তারা বিশাল এ আকার-টি,
বুকে যেন থাকে এই প্রশস্ত 'হার্ট’-ই।

                                                                                       (জনৈক 'ডার্টি’)



মাসুদুল হাসান কুরাইশী'র ৩০ তম জন্মদিনে লেখা উইশ-কাব্য

যুক্তরাষ্ট্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি

অতি দ্রুত ড্রাইভিং শেখার খুব বড় কোন প্রয়োজন আমার ছিল না। টেম্পি নগর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত ফ্রি বাস এ চড়ে দিনকাল ভালোই কেটে যাচ্ছে, আর গাড়ি কেনার প্রয়োজন (এবং সামর্থ্য) আপাতত নাই। ড্রাইভিং শিখলে আমার গবেষণাকর্মে সহায়ক হবে - এইরকম একটা গালভরা কাহিনী আমি নিজেই রটিয়েছি; সেটা সত্য হলেও মুখ্য না। অন্তর্নিহিত কোন এক ‘ড্রাইভিং ফোর্স’ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। টেম্পিতে বসবাসরত ভাই-বেরাদারদের অনেকেই আমার এই ‘অন্তরে নিহিত’ আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ‘যন্তরে নিহত’ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন। মূলত প্রথমদিন ড্রাইভিং সীটে বসে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ব্রেক কোনটা, আর এক্সিলারেটর কোনটা?” - তখনই পিছনের সীটে বসা ধুরন্দর গবেষক অভি বুঝে গিয়েছিল এটা মোটেই আমার অভিনয় নয়। সে অবস্থা বেগতিক দেখে তখনই জান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে গাড়ি থেকে নেমে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি ‘ব্রেক’ ভেবে ‘এক্সেলারেটর’ চেপে ধরায় বেচারা নামতে পারে নাই…।

এদিকে আমি গাড়ি চালানো শিখবো শুনে টেম্পির বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে আনন্দোচ্ছাস্‌ বয়ে গেল, সবাই স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ফেললো এই ভেবেঃ  “যাক বেশিদিন তাহলে আর এইসব বস্তাপঁচা লেইম-জোক শুনতে হবে না … তারিক/ভাই আর বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবে/ন না”। আমার বিদায়ের ‘হর্ণ-টা’ বেজে গিয়েছে ধরে নিয়ে দুদিন পরপরই এর-তার জন্মদিনের উৎসবের নাম করে ঘরে ঘরে কেক কাটা এবং তুমুল খাওয়াদাওয়া’র আয়োজন হতে লাগলো এবং বোকার মতো আমি নিজেই এই সমস্ত অনুষ্ঠানে ‘ভুক্ত’ খাবারগুলার সর্বোচ্চ ‘ভোগী’ হতে লাগলাম।

আমার “চিরতরে না থাকা”র ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে সহযোগিতার কর (/car) বাড়িয়ে দিলো নির্মাণ সাহা। সে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে তার (জানালা খোলা থাকা শর্তে-) ‘প্রাকৃতিকভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত’ এবং ঈষৎ অনিয়ন্ত্রিত ব্রেকসম্বলিত খানদানি শেভ্রোলেট মন্টে-কার্লো গাড়িটা আমাকে কদিনের জন্য প্রশিক্ষনার্থে চালাতে দিলো।
এদেশে আসার আগে ঢাকার একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কিছুদিন ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে অনুশীলন করেছিলাম বটে, কিন্তু এখানে এসে সবকিছুই নতুন করে শিখতে হলো। দেশে ম্যানুয়াল গাড়িতে ‘ক্লাস’ হিসেবে পরিচিত যে বস্তুটাকে সঠিকভাবে দাবায়ে রাখতে না পেরে প্রশিক্ষকের ঝারি খেয়েছি নিয়মিত, এখানে এসে শুনি সেটার নাম আসলে ‘ক্লাচ’ (Clutch), এবং সৌভাগ্যক্রমে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলাতে ওই বস্তু থাকে না। উল্টা (/বাম) দিকে সীট, রাস্তার উল্টা (ডান) দিক দিয়ে গাড়ি চালানো এইসব মানাতে বেশি সমস্যা হয় নাই।

বৃহত্তর ফিনিক্স এলাকার স্বনামধন্য প্রশিক্ষক শেখ মিনহাজ হোসেন পাশে বসে নিয়মিত প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করেছে এবং নির্মাণ সাহা পাশে বসে কিছুদিন ‘স্লেজিং’ করেছে। এছাড়া আমার টেস্ট-ড্রাইভে যাত্রী হিসেবে অভি এবং যুবায়ের দুই একদিন গাড়িতে বসে চেহারায় ‘ভয়-না-পাওয়া’ ভাব বজায় রাখার অভিনয় করেছে। ফলশ্রুতিতে সপ্তাহদুয়েক অনুশীলন করার পর গাড়ি চালানোর ব্যাপারে আমি শুধু সিদ্ধ-‘হস্ত’ হয়েছি বললে কম বলা হবে, এই গ্রীষ্মে এরিজোনার কাঠফাটা-পিচগলা উত্তাপে শীতাতপ-অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আমার আপাদমস্তকই সিদ্ধ হয়েছে। অগত্যা এরিজোনা’র পরিবহন বিভাগ আমাকে গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্র দিতে বাধ্য হল।

নির্মাণ অবশ্য এখনও হাল ছাড়েনি, বরং হুইল (স্টিয়ারিং) ছাড়তে উদগ্রীব… শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত  (কিংবা ‘আমার চিরতরে শেষ হওয়ার খবর’ না পাওয়া পর্যন্ত) সে আমাকে তার এই খানদানি গাড়িটা নামমাত্র ($$$$?) মূল্যে গছিয়ে দেয়ার ধান্দায় আছে।

------------------
Nirman Saha​ এবং Sheikh Minhaj Hossain​ - কে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা এতো অনায়াসে পাওয়া সম্ভব হতো না।


এটি ফেসবুকে প্রকাশিত আমার এই পোস্ট এর হুবহু প্রতিলিপি।

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

"ক্রসফায়ার"




আমাদের উঠতি বয়সের যুবকদের মাদকাসক্ত হওয়া ঠেকাতে না পারা, তাদের সময়মত নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারা, পশুপ্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরার শিক্ষা দিতে না পারা …
এবং ফলশ্রুতিতে
আমাদের মা - বোন - শিশুদেরকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারা, আমাদের পথচারীদের ছিনতাইকারি’র হাতে খুন হওয়া ঠেকাতে না পারা …
এগুলা যেমন আমাদের ব্যার্থতা,
তেমনি,
কোনরকম বিচারের মধ্য দিয়ে না গিয়ে, গুলি করে মেরে ফেলাটাও আমাদের আইন প্রয়োগে বিশাল সাফল্যের কোন সূচক না।

আমার মতো আবেগ-তাড়িত সাধারণ মানুষের মন চায়, “এইসব বিচার ফিচারে মধ্যে যাওয়ার দরকার কী?… চিপায় নিয়া গুলি কইরা মাইরা ফালাইলেই হয়…”। এবং দিনশেষে আমাদের এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনই ঘটছে আমাদের প্রশাসনের কর্মকান্ডে। দু-চারটা শিয়াল কুকুর মেরে যদি তড়িৎ গতিতে কোটি কোটি মানুষের মনোরঞ্জন করা যায়, সে সুযোগ কে না লুফে নেয়?
মাঝে মাঝে হয়তো ছোটখাটো কিছু সমস্যা হবে, শিয়াল কুকুরের জায়গায় দুই একটা নিরীহ মানুষের বাচ্চা মারা পড়বে… এবং সেটা কেউ কোনদিন টেরও পাবে না। দু চারটা ছোটখাটো পরিবার তছনছ হয়ে যাবে … বৃহত্তর স্বার্থে হয়তো এক দুইটা নিরীহ পরিবারের ধ্বংস হয়ে যাওয়া খুব ছোট বিষয়।
(এই পর্যায়ে এসে সেই ধর্ষনের শিকার হওয়া পরিবারটার অবর্ণনীয় কষ্টের কথাও আপনার মাথায় আসবে স্বাভাবিকভাবেই। এর মাঝে কোন্‌ পরিবারের দুঃখ লাঘব করা বেশি জরুরী সেটা নিরূপণ করার উপায় নিয়েও আপনার মাথায় চিন্তা আসতে পারে …  সেক্ষেত্রে এই লেখার দ্বিতীয় অংশ পড়ার অনুরোধ করবো।)

ব্যাপারটার ভয়াবহতা আমি এখন টের পাচ্ছি না, হয়ত “মাইরা ফালাইছে ভালো করছে, এইগুলারে এমনেই মারা উচিত” বলে হাততালি দিচ্ছি। কিন্তু ভয়াবহতা টের পাবো, যখন “উপরমহলের” চাপে পড়ে, ন্যায়বিচারের কৃত্রিম আবহ সৃষ্টির প্রয়াসে,  জনগণমনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে প্রশাসন আমার আপনার ঘর থেকেই কাউকে (হয়তো আমাদের কোন এক ছোট ভাই/ নিকটাত্মীয়কে) অস্ত্রোদ্ধারের উদ্দেশ্যে জীবন্ত নিয়ে যাবে এবং লাশ ফেরত দিবে। পরদিন আপনার পরিবারে যখন আপনার নিরপরাধ আত্মীয় হারানোর শোকের মাতন, তখন পুরা দেশ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলবে, “যাক পুলিশ/র‍্যাব অনেক তৎপর, হারামীডারে সাথে সাথে ধইরা মাইরা ফালাইছে”।

ফুলের মতো শিশুদেরকে যেসব শিয়াল কুকুর ছিন্নবিচ্ছিন্ন করছে, তাদের বিচার যেমন জরুরী, ঠিক তেমনভাবে এটা নিশ্চিত করাও জরুরী যে কোন নিরপরাধ ব্যাক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে না।

বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আমি বিশ্বাস করতে চাই -  আমাদের র‍্যাব - পুলিশ - প্রশাসনে সৎ, চৌকশ এবং দক্ষ লোকজনের অভাব নাই, এবং তারা অন্তত এটুকু নিশ্চিত করছে যে নির্দিষ্ট অপরাধে দোষী ব্যাক্তিই এইসব “অনিচ্ছাকৃত ক্রসফায়ারজনিত দুর্ঘটনায়” মারা পড়ছে।




রেললাইনের উপর আপনি একটা ‘ট্ট্রলি কার’ চালাচ্ছেন, হঠাৎ খেয়াল করলেন যে ট্রেনের ব্রেক কাজ করছে না। সামনে পাঁচজন শ্রমিক লাইনের উপর কাজ করছে। আপনি জানেন, যদি এই গতিতে ওদের উপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দেন, তাহলে সবাই মারা পড়বে। অন্যদিকে, সামনে লাইনটা বিভাজিত হয়ে আরেকটা পথে গিয়েছে; ধরুন, আপনি চাইলে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে সে পথেও যেতে পারেন। এবং সে লাইনের উপর মাত্র একজন লোক কাজ করছে। এক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে ভিন্ন পথে গিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একজন মানুষকে মারবেন? নাকি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থেকে সোজা যেমন চলছিলেন চলতে থাকবেন?
আপনি হয়তো বলবেন, “পাঁচজনকে মারার চেয়ে বরং একজনকে মারবো।”
আপনার কোন এক বন্ধু হয়তো বলবে, “আমি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গতিপথ পরিবর্তন করে সেই একজন লোকের উপর দিয়ে ট্রলি চালিয়ে দিই, সেটা হবে পরিকল্পিত হত্যা …”।

কিছুদিন আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরের একটা লেকচারের ভিডিও দেখছিলাম [লিঙ্ক নিচে দেয়া আছে]
লেকচার-টা বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের সাথে খুব বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ না। তবে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের নৈতিক বিচারের মাপকাঠি’র সাপেক্ষে সঠিক আইন প্রণয়ন যে কতো জটিল একটা বিষয় সেটা এই লেকচার-টা দেখলে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে।
সেখানে এই জাতীয় বেশ কিছু বিষয়ে অভিমত চাওয়া হয় ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে। উপরে উল্লেখিত বিষয়টি খুবই সহজ একটা উদাহরণ, এরকম আরও অনেক বিষয় আছে, নৈতিকতার বিচারে যেগুলোর সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা কষ্টকর। ছাত্রছাত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন মতামত এবং সেগুলার পিছনে বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি-তর্ক শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম-  নৈতিক বিচারের ভিত্তিতে সর্বজনগৃহীত মানদণ্ড প্রণয়ন করা বেশ কঠিন একটা কাজ।
এবং এটা খুব স্বাভাবিক যে এ সমস্ত আইনের প্রয়োগ চালু রাখতে গেলে আমার মতো অনেক আবেগি মানুষ কিছু কিছু বিতর্কিত পরিস্থিতিতে ভেটো দিয়ে বসবো।
এজন্য মানুষ সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আইন নিয়ে গবেষণা করে আসছে, এবং এই গবেষণার বিষয়বস্তুর কখনো অভাব হবে না।
আমার মতো মূর্খের আইন নিয়ে আর বেশি কথা বলা মনে হয় আইনত ঠিক  হবে না।

ভিডিওটা দেখবেন। বিনোদনমূলক এবং চিন্তাউদ্রেককারী।

---
"Justice: What's The Right Thing To Do?
Episode 01: THE MORAL SIDE OF MURDER"
https://www.youtube.com/watch?v=kBdfcR-8hEY

রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮

কনা সফ্‌ট্‌ওয়্যার ল্যাবে টিটি খেলার স্মৃতি

কনা সফটওয়ার ল্যাবের সুদিন এসেছে।

সেকালে শুধু দুইবেলা দুই-দান টেবিল টেনিস খেলার আশায় সারাদিন অফিসে গতর খাটতে যেতাম আমরা।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনেক খেলোয়াড় থাকলেও আমাদের ছিল না কোন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাট, বল, এবং সর্বোপরি কোন য্যুতসই টেবিল। ব্যাটের চামড়া না থাকা-টা অবশ্য তেমন মারাত্মক কোন বিষয় না — ( সেটা এখন বুঝি ) উন্নত দেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ-টাকা খরচ করা জিম-এ ও টিটি খেলতে গেলে দুইটা ছাল-ছাড়া ‘প্যাডেল’ ধরিয়ে দেয়। আর বল নিয়েও কনা সফটওয়্যারের পোলাপানের তেমন কোন অভিযোগ ছিল বলে মনে পড়ে না …। তাদের খেলার প্রতি ভালোবাসা এতোই প্রবল যে সম্ভব হলে নিজের প্যান্টের ছেঁড়া পকেটে হাত ঢুকিয়ে বল বের করে সেটা দিয়েই খেলা শুরু করে দিতে চায়। আর নেট এর কাজ টেবিলের মাঝখানে টিস্যু বাক্স পেতে রেখে ভালই চালানো যায় … বল আটকানো দিয়ে কথা…।

কিন্তু টেবিল ছাড়া খেলা হবে কীভাবে?
তাতে কী, “কে এস এল”-এর ছেলেপেলে তো থেমে থাকার পাত্র না।
এর পরের ঘটনা শুধুই ইতিহাস…
কনা সফটওয়্যার এর ছেলেপেলেদের “দুটি ‘টি’ টেবিল জোড়া লাগিয়ে ‘টি-টি’ টেবিল” বানানোর ঘটনা সেসময়ের “কনামাধ্যমে” মুখ্য সংবাদ হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল।

যাই হোক, শুনলাম, কনা সফ্‌টওয়ারের অফিসে অ-স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টি টি টেবিল এসেছে … সেই সাথে এসেছে কোনপ্রকার ‘ভেজাল’বিহীন জাল (Net)।

“কনা এস এল” এ টি টি টেবিল এর আগমনে পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তন কর্মীদের ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি এবং চোখের কোনায় এক ফোটা পানি আসলেও আসতে পারে।

………...................................


আমি খেয়াল করে দেখেছি পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন যারা ঠাট্টা-কৌতুক বোঝেন না…। তাঁদের উদ্দেশ্যে নিচের কথাগুলা লেখাঃ

এই লেখা কনা পরিবারের প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে লিখা। এবং এটা একটা রম্য লেখা (আপনি হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল না_ও করে থাকতে পারেন)।
কনা সফ্‌ট্‌ওয়্যার ল্যাব বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিশ্রমী সফ্‌ট্‌ওয়্যার কোম্পানি’র একটা। আমার লেখায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও কোনভাবে কনা সফ্‌ট্‌ওয়্যারের প্রতি কোন প্রকার নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

(এই লেখা ফেসবুক পোস্ট করা হয়েছিলো)

শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১৮

শাহীনের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা


স্কুলে পড়ালেখায় ফাঁকি দেয়ার উপায় আমার কখনো ছিল না, কারণ 'পড়ালেখা' নামক সোনার হরিণ নিজেই সমস্ত স্কুলজীবন আমাকে ফাঁকি দিয়ে বেড়িয়েছে, কখনো ধরা দেয়নি। তাই আমার নিজ থেকে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে তেমন কিছু করতে হয়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় ফাঁকি দিতে না পারলেও, প্রাতিষ্ঠানিক খেলাধুলায় ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সাফল্যের দাবিদার আমি। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে।

তখন সম্ভবত চতূর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছে তখন শাহীনে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মৌসুম-টা বেশ আনন্দের ছিল। এমনিতেই উৎসবমুখর পরিবেশ, মেলা মেলা একটা ভাব।  খেলা হতো ষোল কোয়ার্টারের মাঠে। আমরা ছাত্রছাত্রী সবাই সকালবেলা স্কুল থেকে একে অপরের পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে হেঁটে হেঁটে মাঠে যেতাম।
স্কুলের সবার সাথেই দেখা হচ্ছে, কিন্তু কোন পড়ালেখা করতে হচ্ছে না, এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে?

মাঠে যাওয়া ব্যাপারে আমার আগ্রহ যতোটা ছিল, খেলায় অংশগ্রহণের আগ্রহ ততোটা ছিল না। খেলাধুলায় তেমন পারদর্শী না হওয়াটা এর মূল কারণ না, মূল কারণ ছিল আশেপাশের কাঠবাদাম, বড়ই, আম, জাম, তেঁতুল, জলপাই এই সমস্ত ফলের গাছ। (আমি জীবনে প্রথমপুতিজামখেয়েছি সেই ষোল কোয়ার্টারে মাঠে যাওয়ার পথের এক গাছে) খেলার মৌসুমে এইসব গাছের অধিকাংশই ফলে ভর্তি থাকারফলশ্রুতিতে আমাদের স্কুলের খাকি প্যান্টের পকেটও রঞ্জিত থাকতো বিভিন্ন ফলের রস এবং কষ -এ।
তাছাড়া শিক্ষকদের চোখ এড়িয়ে মাঠ থেকে পালিয়ে কিছুদূর গেলেই ভাঙ্গা বিমান এবং হেলিকপ্টারের একটাজাংকইয়ার্ড সেখানে গিয়ে উড়োজাহাজের নষ্ট যন্ত্রপাতি কুরানোর চেয়ে আকর্ষণীয় কোন কাজ সেসময় মাথায় আসতো না।

একদিন মাঠে খেলাধুলা চলছে, আর ওদিকে আমি দৈনন্দিন অভ্যাসমতো খালপাড়ে পিঁপড়ার কামড় অগ্রাহ্য করে একটা কাঠবাদাম গাছের ডালে ঠ্যাং দুলিয়ে কাঠবাদাম চিবুচ্ছি। হঠাৎ স্কুলের স্টাফ ইদ্রিস ভাই গাছের গোড়ায় এসে আমাকে নিচে নামতে বললেন। নামার পর বললেন মাঠের অপর প্রান্তে কোন এক ম্যাডাম ডেকে পাঠিয়েছেন। আমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল, আজকে না জানি কী আছেপিঠে সারাবছর ক্লাসে শাস্তি পাই পড়ালেখা পারি না সে কারণে -  সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু খেলার মাঠে এসেও শাস্তি পেলে সেটা তো ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। 
সম্ভবত নাসরিন বানু ম্যাডাম এবং রওশন আরা ম্যাডাম ডেকেছিলেন। কাছে ডেকে কোনরকম বকাঝকা না করে বুঝিয়ে বললেন, গাছে চড়া বিপদজনক; আর যে ছেলের গাছে চড়ার পারদর্শিতা আছে সে চাইলে খেলাধুলায় ভালো করতে পারবেএইরকম কিছু একটা। আমি খুবই অনুপ্রাণিত হলাম। খেলাধুলায় মনোযোগী হলাম। সে বছর সে মাঠে কোন পুরষ্কার ভাগ্যে না জুটলেও এক দুই বছর পর (ষষ্ঠ শ্রেণি-তে) ‘মাঠান্তরে’ (আর টি এস এর মাঠে) খেলাধুলায় কিছু পুরষ্কার পেয়েছিলাম। (সেটা অবশ্য নতুন মাঠের পাশে ফলের গাছের বদলে ঝাউ-গাছ থাকার কুফলও হতে পারে।)

ষষ্ঠ শ্রেনি সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সপ্তম শ্রেণিতে আবার খেলাধুলায় নাম দিলাম। সেবার আমার একক প্রচেষ্টায় চার গুণিতক-১০০ মিটার রিলে দৌড় প্রতিযোগিতায় আমাদের দল দ্বিতীয় স্থান লাভ করেবলাই বাহুল্য, প্রথম স্থান লাভ করার কথা ছিলআমি সময়মত 'রিলে-ব্যাটন' আমাদের ফার্স্ট-বয় ওসমানের হাতে পৌঁছাতে পারিনি বিধায় দ্বিতীয়-স্থান জোটে।

সেটাই মূলত আমার সংক্ষিপ্ত 'খেলোয়ারজীবনের' পরিসমাপ্তি।

এই লেখা ফেসবুকের এই পোস্ট এর হুবহু অনুলিপি

শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

স্যান ডিয়েগো সফর - ২০১৮

আমার জন্ম ২১-শে ফেব্রুয়ারি’র খুব কাছাকাছি বলেই কি-না জানি না, মাতৃভাষার ব্যাপারে আমি একটু বেশিই উৎসাহী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘উদযাপন’-এর ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশের মানুষ যতো আগ্রহী, অন্যান্য দেশের মানুষ ততো আগ্রহী না। তাদের কাছ থেকে আশা করাও যায় না … একে তো তারা ভাষার জন্য রক্ত দেয়নি, তার উপর এই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা-দিবস’ ব্যাপারটা’র প্রচলন হয়েছে বেশিদিন হয়নি… অনেকেই এইটার ব্যাপারে জানে না। প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান-দিয়েগো শহরে চারদিনের একটা সফরে গিয়েছিলাম। সফরসঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন দেশের ছাত্র ছিল। অনেক বলে কয়ে তাদের কয়েকজনকে শুধু “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” কথাটা তাদের নিজেদের ভাষায় বলাতে পেরেছি। তারা যারপরনাই বিরক্ত হয়েছে সেটাও বুঝতে পেরেছি। নিরাপত্তা-বিষয়ক গবেষনা’র উপর কঠিন কঠিন সব কথাবার্তা (Talk) শুনিয়ে আমাদের ‘কান’ পাকানো’র মহৎ উদ্দেশ্যে ল্যাব-এর প্রফেসর-রা এই বছর গুরু-‘গাধা’ নির্বিশেষে সব পি এইচ ডি ছাত্রদেরকে মূলত ‘কান-ধরে’ই টেনে নিয়ে গেলেন Network and Distributed System Security 2018 symposium -এ। প্রফেসরদের কড়া নির্দেশঃ শুধু কান পাকালেই চলবে না, কিছুটা ‘ঠোঁটকাটা’ হয়ে সেখানে আন্তর্জাতিক-মানের যতসব গবেষক আসবেন তাঁদের সাথে জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা বলার ভান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করার যথাসাধ্য চেষ্টাও করতে হবে। শীতে কিছুটা ঠোঁট ফাঁটলেও সত্যিকার অর্থে “ঠোঁটকাটা” হয়ে আগ-বাড়িয়ে কথাবার্তা বলা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তার উপর এতো সব বাঘা-বাঘা গবেষক, তাঁদের সাথে কী নিয়ে কথা বলবো সেটাই বুঝে পাই না। সিম্পোজিয়াম যে হল-রুমে হচ্ছে তার এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি আমি আর নেপালি বন্ধু অনুষ (अनुस श्रेष्ठ)। সে-ও আমার মতো পি এইচ ডি প্রথম বর্ষের ছাত্র। স্থলাবদ্ধ দেশে বেড়ে উঠেছে সে, কখনো সাগর দেখেনি। স্যান ডিয়েগো এসে জীবনে প্রথমবার সাগরের ঢেউ দেখে আনন্দে আত্মহারা — তার উপর সেটা আবার প্রশান্ত মহাসাগর। প্রফেসরদের-দের নারাজ হওয়ার ভয়ে সারাদিন সিম্পোজিয়ামের বিরক্তিকর সব বক্তৃতা শুনলেও, তার মন সারাক্ষণ পড়ে থাকে সৈকতে। ফাঁকফোকর পেলেই দৌড়ে চলে যায় সাগর-পাড়ে, গিয়ে শিশুদের মতো ঝিনুক কুঁড়ায়, বালিতে নাম লিখে সেটার ছবি তুলে। তূর্কি বন্ধু ফারিস অবশ্য লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলার ব্যাপারে বেশ সপ্রতিভ। সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, আমাদের ল্যাবের পুরাতন লোক। গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহের কাজে এমনিতেই তার বড় বড় কোম্পানি’র হর্তাকর্তা লোকজনের সাথে কথা বলতে হয় নিয়মিত। তবে একটু ভালোভাবে খেয়াল করে দেখা গেল, সে সেখানকার নারী বক্তাদের সাথে কথা বলার ব্যাপারে তুলনামূলক কিছুটা বেশি উৎসাহী। সিম্পোজিয়ামের প্রথমদিন ক্রিপ্টোকারেন্সি’র উপর এক জার্মান সুন্দরী’র গবেষণার উপস্থাপনা দেখে, রাতে ক্রিপ্টোকারেন্সি’র উপর বিস্তর পড়ালেখা করা সত্ত্বেও পরের দিন সেই বক্তা’র সাথে কথা বলতে গিয়ে সে যারপরনাই নাজেহাল হয়েছে এমন খবর আমাদের ল্যাবের নিন্দুকেরা রটাচ্ছে। ঘটনা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য ক্ষীণ। নেপালি, তূর্কি আর এই অধম বাঙ্গালী ব্যাতিত বাকি ছাত্রছাত্রী ছিল ইরানি এবং চীনা। চীনা’রা আমাদের যথেষ্ট ‘চিনা’ হওয়া সত্ত্বেও কেন যেন নিজেদের একটা গ্রুপে একসাথে গল্পগুজবে নিমজ্জিত থাকে সবসময়। এটা শুধু সিম্পোজিয়ামে না, ক্যাম্পাসে- ক্লাসে, ল্যাবে সব জায়গায়। ইরানিরাও এর ব্যাতিক্রম না। আমরা বেশ কয়েকজন বাঙ্গালী একত্রে থাকলে আমরাও হয়তো নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতাম আমাদের আড্ডডাবাজি। আন্তর্জাতিক আড্ডাবাজি যে একদম হয় নাই তা না। আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য পায় ভাষার বৈচিত্র্য। এক ফাঁকে আমি প্রস্তাব দিলাম বিভিন্ন ভাষার কঠিন কঠিন ‘টাং টুইস্টার’ খেলার। খেয়াল করে দেখলাম, এই খেলায় বাংলাভাষী হিসেবে আমার সুবিধা অনেক বেশি। অন্যরা তাদের ভাষার যেসব ‘টাং টুইস্টার’ নিজেরাই বলতে হিমশিম খাচ্ছে, আমি অবলীলায় সেগুলা বলে যাচ্ছি। অবশেষে আমি আমার সাফল্যের গোপন রহস্য উন্মোচন করলাম - বাংলা বর্ণমালায় ৫০ টি বর্ণ। পৃথিবী’র অধিকাংশ ভাষার কঠিন কঠিন ধ্বনি-ই সম্ভবতঃ আমরা অল্পায়াসে রপ্ত করে ফেলতে পারবো। সিম্পোজিয়াম চলাকালে কথা যেটুকু বলেছি সেটা সেখানে দেখা হয়ে যাওয়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত দুইজন বাংলাদেশী তরুণ গবেষক ডঃ এনদাদুল হক ভাই এবং সৈয়দ রাফিউল -এর সাথে। এছাড়া আমার মতোই কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা স্যামুয়েল নামের একটা ছেলের সাথে কয়েকবার কথাবার্তা হয়। কনফারেন্স শেষে award দেয়ার পর দেখা গেল, Distinguished Award পাওয়া প্রথম পেপার-টার লেখক যৌথভাবে সেই স্যামুয়েল এবং এনদাদ ভাই। মন-টা ভালো হয়ে গেল, বেছে বেছে যে দুই একজনের সাথে কথা বলেছি তাঁরাই সেরা এবং এর মধ্যে আমার দেশের লোকও আছে। অবশেষে ঠোঁটকাটা হতে না পারলেও, ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, সিম্পোজিয়ামের জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা শুনে কান কিছুটা পেঁকেছে। আমার ল্যাবমেট নেপালি, তূর্কি, চীনা, ইরানি এবং আমেরিকান যেসব ছাত্রছাত্রী ছিল, আমার ‘লেইম-জোক’ শুনে তাদের অবশ্য কান পঁচে যাওয়ার মতো অবস্থা। বাংলা ভাষায় আমার খোঁড়া-কৌতুক ইতিমধ্যেই বাঙ্গালী-সমাজে সর্বজন-নিন্দিত। সেগুলা ইংরেজি-তে অনুবাদের পরেও এতোটা নিন্দা কুড়াবে সেটা আশাতীত ছিল। যাই হোক, শিক্ষা-সফর শেষে লাভ যেটা হলো, আমার মাতৃভাষার শক্তি আরেকটু ভালভাবে অনুধাবন করলাম। তাছাড়া জীবনে প্রথমবার প্রশান্ত-মহাসাগর দেখলাম; আমার ল্যাবমেট-দের অনেকের সাথেই সম্পর্ক বেশ সহজ হয়েছে - যেটা ভবিষ্যতে পি এইচ ডি’র দূর্গম পথ পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে আশা করা যায়।
[এই লেখা Facebook-এ প্রকাশিত আমার এই পোস্ট থেকে কপি পেস্ট করা।]

শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

'আঁসু' ভেজা চোখে দেখা ভেজা ASU

বৃষ্টি-ভেজা ASU -- খুবই বিরল দৃশ্য। 
"arid zone" Arizona-তে বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় কালেভদ্রে।

বৃষ্টি দেখলে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে মন চায়।
"ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাইরে" -- কবিগুরুর সাথে আমার এইখানে কিছুটা মতানৈক্য।
(অবশ্য ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় বৃষ্টি নামলে কবিগুরুর এই বাণী অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করতাম ... হাজার হোক কবিগুরু তিনি, মাঝে মাঝে তো অন্তত গুরুর কথার গুরুত্ব দেয়া লাগে।)

গত পরশুদিন ঘুম থেকে উঠে বাইরে বৃষ্টি দেখে দ্রুত ঘর বের হয়ে গেলাম। সেদিন সারাদিনই বৃষ্টি হয়েছে, গুঁড়ি-গুঁড়ি; বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে দেশে যেমন হয়। মেঘলা আকাশ, ভেজা রাস্তা, এইসব দেখে  বাংলাদেশের সমস্ত বাদল দিনের স্মৃতি একসাথে হানা দেয় মনে, চোখের কোনায় দুই এক ফোঁটা পানি জমে -- বৃষ্টির পানিই হবে হয়তো।

মনে পড়ে যায় ১০-১১ বছর আগে এক দিনের কথা। সেদিন SUST ক্যাম্পাসে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ভিজেছিলাম - সাথে ছিল "কবি-রাজ" Farhad। (কবি-রাজ খেতাবটা আমারই দেয়া অবশ্য)। এই ক্যাম্পাসে কবি-রাজ এর মতো সেইরকম ভাবের-ঘোরে আচ্ছন্ন ভবঘুরে সঙ্গী পাওয়া যায় না। এইখানকার মানুষ রোবটের মতো - এরা শখ করে বৃষ্টিতে ভিজে না, 'শর্ট-সার্কিট' হয়ে যাবে এই ভয়েই সম্ভবত। এইখানেও ক্যাম্পাসের আশেপাশে পাহাড়ের অভাব নাই, কিন্তু এই ক্যাম্পাসে কাওসার, Salak, Tareq নাই যাদেরকে নিয়ে ক্যাম্পাসের আশেপাশের সমস্ত পাহাড়ি এলাকা, রাস্তাঘাট যখন-তখন হেঁটে-হেঁটে চষে বেড়ানো যায়...।

'আঁসু' ভেজা চোখে ভেজা ASU দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে। 
দেশের অভ্যাস মতো কিছুক্ষণ পরপর পিছন ফিরে দেখছিলাম প্যান্টের পিছন-টায় কাদা লাগলো কি-না -- দেখা গেল পরিষ্কারই আছে। এখানে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় হাঁটা দেশের তুলনায় আরামদায়ক, প্যাঁক-কাদা নাই। রাস্তাঘাট একদম ঝকঝকে।

প্যাঁক-কাদাহীন, এমন মসৃণ রাস্তায় পথচলা এতো কষ্টকর হবে সেটা তো আগে বুঝতে পারি নাই।
[এই লেখা Facebook-এ প্রকাশিত আমার এই পোস্ট থেকে কপি পেস্ট করা।]