সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮

'সামার'


সে রাতে ঘুমাতে গিয়ে গুরু’র সাথে সাক্ষাৎ (অবশ্যই স্বপ্নে)।
গুরুমশাই বললেনঃ কিরে বৎস কেমন আছিস?
আমি বললাম, গুরুজী, দিনকাল চলে যাচ্ছে কোনরকম।
গুরুজিঃ এরিজোনায় কী করিস?
আমিঃ উচ্চশিক্ষার্থে এসেছি গুরু, তবে আপনার মতোই অবস্থা, পড়ালেখায় মন নাই। দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে, সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করতে ইচ্ছা করে।
গুরুজিঃ লক্ষণ তো ভালো না। আমি নাহয় জমিদার বংশের লোক ছিলাম, এইসব করে পার পেয়ে গিয়েছি; তোর তো কিছুই নাই, এইসব খামখেয়ালি করে পরে বিপদে পড়বি। পড়াশুনায় মন দে। আর পাশাপাশি একটু আধটু লেখালেখি চালিয়ে যা।
আমিঃ অবশ্যই, গুরুজি। আপনার উপদেশ শিরোধার্য।
গুরুজিঃ তুই যেহেতু এরিজোনায় আছিস, গ্রীষ্মকাল, মরুভূমি এইসব নিয়ে লিখতে পারিস। আষাঢ়, বৃষ্টি-বাদল, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি এইসব নিয়ে আমি তো অনেক লিখেছি, গ্রীষ্ম নিয়ে খুব একটা লেখা হয়নি।
আমিঃ লিখেছেন তো মনে হয় কিছু। এই মুহুর্তে বিরহ কবিতাটা’র এই লাইনগুলো মনে পড়ছেঃ
“তুমি যখন চলে গেলে
          তখন দুই - পহর—
সূর্য তখন মাঝ - গগনে,
           রৌদ্র খরতর।”
গুরুজিঃ আরে, ওটা তো গ্রীষ্ম নিয়ে লেখা না…।
আমিঃ তা অবশ্য ঠিক,  তবে ভালো ভাবে আপনার রচনাবলী খুঁজে দেখলে হয়ত আরও কিছু পাবো।
গুরুজিঃ হ্যাঁ খুঁজে দেখতে পারিস।
আমিঃ একটা কাজ অবশ্য করা যায়, আপনার ‘আষাঢ়’ কবিতাটা’র আদলে গ্রীষ্মকাল নিয়ে একটা ‘উত্তরাধুনিক’ প্যারডি লিখতে পারি, যদি আপনার অনুমতি পাই … ।
গুরুজিঃ লিখে ফেল। এতে আবার এতো অনুমতি চাইবার কী আছে।

এরপর ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠেই লিখে ফেললাম এই ‘প্যারবি’।

-------------------------------------

‘সামার’

নীল নবঘনে ‘সামার’-গগনে কোনো মেঘ আজ নাহি রে,
ওরে, আজ পোড়া যাস্‌নে ঘরের বাহিরে।
তপনের তাপ আজি বড় খর,
তপ্ত ধরাতে জান মরমর,
শানিত কিরণে চক্ষু মেলিয়া কোন সাহসে আমি চাহিরে।
ওরে, আজ পোড়া যাস্‌নে ঘরের বাহিরে।

রৌদ্রে পুড়িয়া, ঘর্মে ভিজিয়া ভুত-সদৃশ সাজি রে।
উত্তাপে হলো ঘিলু-মস্তক ভাজি রে।
বহিছে লূ-হাওয়া ভুবন জুড়িয়া
দাবদাহে যায় চর্ম পুড়িয়া,
এহেন গরমে লাগেনা তো ভালো করিতে কোন কাজই রে।
উত্তাপে হলো ঘিলু-মস্তক ভাজি রে।

পিচ-‘গলা’ এই পথটারে মোরা কেউ কভু ভালোবাসি নাই,
দেখ, আজ কারোও মুখে হাসি নাই।
যেদিকে তাকাই দেখি মরু ধু ধু
বিধাতার কাছে প্রার্থনা শুধু
বসন্ত-প্রাতে অনুভূত সেই বায়ু যেন বারো মাসই পাই।
দেখ, আজ কারও মুখে হাসি নাই।

সূর্য দেবতা জ্বলিছে গগনে দেখো ওই ‘ফুল-ব্রাইট’-এ।
ওরে, আজ তোরা যাস্‌নে রে ‘সান-লাইট’-এ।
চামড়া পুড়ায়ে কী লাভ হবে?
রবিরে ডরায়ে র’বি ঘরে সবে।
‘শ’কুড়ি উঠিল তাপমাত্রা আজকে ‘ফারেনহাইটে’,
ওরে, আজ তোরা যাস্‌নে রে ‘সান-লাইট’-এ।

-------------------------------------

তারিক মোঃ নাসিম
এরিজোনা
২২ জৈষ্ঠ্য, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ।

#প্যারবি
#তারিক_নাসিম

(এই লেখা ফেসবুকে'র 'পেন্সিল' নামক গ্রুপে প্রকাশিত হয়েছিল)

স্কুলজীবনের প্রিয় শিক্ষকদের কথা

আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মহিউদ্দিন স্যার, ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন। আমাদের স্কুলে পড়েছে, কিন্তু মহিউদ্দিন স্যারের বেতের/স্কেলের বাড়ি না খেয়ে স্কুল লাইফ পাড় করেছে এমন খুব কম ছাত্রই আছে। স্যারের নিয়মিত ডায়ালগ ছিল, "ওই-ত্তর গুরু" - এটা দিয়ে স্যার আসলে কী বুঝাতে চাইতেন আমি এখনও নিশ্চিত না, সম্ভবত "ওই গরু"। স্যারের ইসলাম শিক্ষা'র নোট পড়ে আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এস এস সি পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে A+ পেয়েছিল।

নবম-দশম শ্রেণীতে সামাজিক বিজ্ঞান পড়াতেন আবু-সাইয়ীদ স্যার। মন মেজাজ একটু খারাপ থাকলে প্রথমে আগেরদিনের পড়া জিজ্ঞেস করতেন, সেক্ষেত্রে অধিকাংশ ছাত্রেরই দুইএকটা স্কেলের বাড়ি খেতে হত, অথবা শাস্তি-স্বরূপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হত। স্যার অনেক গল্প করতেন ক্লাসে। মোটামুটি মুঘল আমল থেকে শুরু করে তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী (ক্লিংটন-লিউনস্কি), ধর্ম, রাজনীতি, বাংলাদেশ, আমেরিকা, তুরস্ক, আফগানিস্তান কোনোকিছুই বাদ যেত না স্যারের একটা ক্লাসের আলোচনায়। শেষ ৫ মিনিটে স্যার বইয়ের এক দুইটা পাতা দ্রুত পড়ে যেতেন, আর বলতেন, এইটুকু বাসায় পড়ে আসতে। স্যারের খুব কমন ডায়ালগ ছিলঃ "এটাই হল বাস্তবতা"।
এছাড়া “পরীক্ষার টেনশনে পড়ালেখা হয় না” - এই কথাও স্যারের মুখেই প্রথম শুনেছিলাম।

কৃষিশিক্ষা'র শিক্ষক আবুল কাশেম স্যার খুব মজার মানুষ ছিলেন। যেহেতু স্কুলে একই নামে আরেকজন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, সেহেতু, উনার নাম হয়ে গেল "কৃষি-কাশেম"। স্যারের ক্লাসে নকল করা খুব সহজ ছিল। আমি খুব বোকাসোকা ছাত্র ছিলাম, তাই নকল করতে পারতাম না (নকল করতেও বুদ্ধি লাগে)। জীবনে যে দুই একবার বড়মাত্রার নকল করেছি সেগুলা কৃষি-শিক্ষা'র 'ক্লাস-টেস্ট'-এ। স্যারের ডায়ালগ ছিলঃ "কান ছাই ধর”।

গণিত পড়াতেন আব্দুস সোবহান ফারুকী স্যার। স্যার আমাদের বইয়ের প্রায় সব অঙ্কই করে দিতেন ক্লাসে। আমাদের নিজেদের মাথা-খাটিয়ে করার আর বেশি কিছু বাকি থাকতো না। আমি গণিতে খুব দুর্বল ছিলাম, এবং স্যার এটা জানতেন। আমি যখন হঠাৎ কোন একটা অঙ্ক মিলিয়ে স্যারকে দেখাতাম, স্যার অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। স্যার সবাইকে গণিত নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করার বিষয়ে নিয়মিত সাবধান করতেন, বলতেনঃ “গণিতের সাগরে সাঁতার দিতে যেও না, পাড়িও দিতে পারবে না, ফিরেও আসতে পারবে না, হাবুডুবু খেয়ে মরতে হবে”।

প্রাইমারী স্কুলে পেয়েছিলাম প্রদীপ স্যারের ক্লাস। স্কুলজীবনে তাঁর মতো মেধাবী এবং মজার মানুষ আর কাউকে পাই নাই। স্যার আমাদের গণিত পড়াতেন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে। কেউ দুষ্টামি করলে বা পড়া না পারলেই বলতেন, “মস্তিষ্ক গুঁড়ো করে দিবো”। মস্তিষ্ক, ভঙ্গুর জিনিস না, থলথলে একটা বস্তু, এটাকে কেন স্যার গুঁড়া করে দিবেন বলতেন জানি না। তবে স্যার কখনো কাউকে পিটাতেন না।

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত (২০০১ SSC - ২০০৩ HSC ব্যাচ) তসলিমা আক্তার ম্যাডামের রসায়ন ক্লাস পেয়েছিলাম। অত্যন্ত যত্ন নিয়ে পড়িয়েছেন আমাদের। ম্যাডাম-কে নিয়ে একটা মজার স্মৃতি মনে পড়লো।আমি কলেজে উঠে স্কুলের চেয়ে আরো বেশ ফাঁকিবাজ হয়ে গেলাম। সেই-সাথে আলসেমি এবং কিপটামি করে বাংলা-ইংরেজি-ম্যাথ-কেমিস্ট্রি-ফিজিক্স এই সব বিষয়ের ক্লাস-নোট নেয়ার জন্য শুধুমাত্র দুই-টা লম্বা খাতা ব্যাবহার করতাম। ওই খাতাগুলায় খুবই ছোট-ছোট অক্ষরে লিখতাম যেন পুরা ইন্টারমিডিয়েট ওই খাতা দুইটা দিয়ে চালিয়ে দেয়া যায় (খুবই ছোটলোকি মানসিকতা -- এখন বুঝতেছি --- পড়াশুনার ব্যাপারে এতো কিপটামি না করলেও চলতো)। একদিন তসলিমা ম্যাডামের চোখে পড়লো আমার সেই মাইক্রোস্কোপিক লেখা। ম্যাডাম বললেনঃ "বাপের টাকাই যদি এতো কিপটামি করে খরচ করো, ভবিষ্যতে নিজের টাকা কীভাবে খরচ করবে?..."


(বি এ এফ শাহীন, চট্টগ্রাম)

-----------------------------------
ফেসবুকে এই  পোস্টে আমার কমেন্ট থেকে নেয়া।