সোমবার, ৪ জুন, ২০১৮

স্কুলজীবনের প্রিয় শিক্ষকদের কথা

আমাদের সবার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মহিউদ্দিন স্যার, ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন। আমাদের স্কুলে পড়েছে, কিন্তু মহিউদ্দিন স্যারের বেতের/স্কেলের বাড়ি না খেয়ে স্কুল লাইফ পাড় করেছে এমন খুব কম ছাত্রই আছে। স্যারের নিয়মিত ডায়ালগ ছিল, "ওই-ত্তর গুরু" - এটা দিয়ে স্যার আসলে কী বুঝাতে চাইতেন আমি এখনও নিশ্চিত না, সম্ভবত "ওই গরু"। স্যারের ইসলাম শিক্ষা'র নোট পড়ে আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এস এস সি পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে A+ পেয়েছিল।

নবম-দশম শ্রেণীতে সামাজিক বিজ্ঞান পড়াতেন আবু-সাইয়ীদ স্যার। মন মেজাজ একটু খারাপ থাকলে প্রথমে আগেরদিনের পড়া জিজ্ঞেস করতেন, সেক্ষেত্রে অধিকাংশ ছাত্রেরই দুইএকটা স্কেলের বাড়ি খেতে হত, অথবা শাস্তি-স্বরূপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হত। স্যার অনেক গল্প করতেন ক্লাসে। মোটামুটি মুঘল আমল থেকে শুরু করে তৎকালীন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী (ক্লিংটন-লিউনস্কি), ধর্ম, রাজনীতি, বাংলাদেশ, আমেরিকা, তুরস্ক, আফগানিস্তান কোনোকিছুই বাদ যেত না স্যারের একটা ক্লাসের আলোচনায়। শেষ ৫ মিনিটে স্যার বইয়ের এক দুইটা পাতা দ্রুত পড়ে যেতেন, আর বলতেন, এইটুকু বাসায় পড়ে আসতে। স্যারের খুব কমন ডায়ালগ ছিলঃ "এটাই হল বাস্তবতা"।
এছাড়া “পরীক্ষার টেনশনে পড়ালেখা হয় না” - এই কথাও স্যারের মুখেই প্রথম শুনেছিলাম।

কৃষিশিক্ষা'র শিক্ষক আবুল কাশেম স্যার খুব মজার মানুষ ছিলেন। যেহেতু স্কুলে একই নামে আরেকজন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, সেহেতু, উনার নাম হয়ে গেল "কৃষি-কাশেম"। স্যারের ক্লাসে নকল করা খুব সহজ ছিল। আমি খুব বোকাসোকা ছাত্র ছিলাম, তাই নকল করতে পারতাম না (নকল করতেও বুদ্ধি লাগে)। জীবনে যে দুই একবার বড়মাত্রার নকল করেছি সেগুলা কৃষি-শিক্ষা'র 'ক্লাস-টেস্ট'-এ। স্যারের ডায়ালগ ছিলঃ "কান ছাই ধর”।

গণিত পড়াতেন আব্দুস সোবহান ফারুকী স্যার। স্যার আমাদের বইয়ের প্রায় সব অঙ্কই করে দিতেন ক্লাসে। আমাদের নিজেদের মাথা-খাটিয়ে করার আর বেশি কিছু বাকি থাকতো না। আমি গণিতে খুব দুর্বল ছিলাম, এবং স্যার এটা জানতেন। আমি যখন হঠাৎ কোন একটা অঙ্ক মিলিয়ে স্যারকে দেখাতাম, স্যার অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। স্যার সবাইকে গণিত নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করার বিষয়ে নিয়মিত সাবধান করতেন, বলতেনঃ “গণিতের সাগরে সাঁতার দিতে যেও না, পাড়িও দিতে পারবে না, ফিরেও আসতে পারবে না, হাবুডুবু খেয়ে মরতে হবে”।

প্রাইমারী স্কুলে পেয়েছিলাম প্রদীপ স্যারের ক্লাস। স্কুলজীবনে তাঁর মতো মেধাবী এবং মজার মানুষ আর কাউকে পাই নাই। স্যার আমাদের গণিত পড়াতেন ক্লাস ফাইভ-সিক্সে। কেউ দুষ্টামি করলে বা পড়া না পারলেই বলতেন, “মস্তিষ্ক গুঁড়ো করে দিবো”। মস্তিষ্ক, ভঙ্গুর জিনিস না, থলথলে একটা বস্তু, এটাকে কেন স্যার গুঁড়া করে দিবেন বলতেন জানি না। তবে স্যার কখনো কাউকে পিটাতেন না।

নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত (২০০১ SSC - ২০০৩ HSC ব্যাচ) তসলিমা আক্তার ম্যাডামের রসায়ন ক্লাস পেয়েছিলাম। অত্যন্ত যত্ন নিয়ে পড়িয়েছেন আমাদের। ম্যাডাম-কে নিয়ে একটা মজার স্মৃতি মনে পড়লো।আমি কলেজে উঠে স্কুলের চেয়ে আরো বেশ ফাঁকিবাজ হয়ে গেলাম। সেই-সাথে আলসেমি এবং কিপটামি করে বাংলা-ইংরেজি-ম্যাথ-কেমিস্ট্রি-ফিজিক্স এই সব বিষয়ের ক্লাস-নোট নেয়ার জন্য শুধুমাত্র দুই-টা লম্বা খাতা ব্যাবহার করতাম। ওই খাতাগুলায় খুবই ছোট-ছোট অক্ষরে লিখতাম যেন পুরা ইন্টারমিডিয়েট ওই খাতা দুইটা দিয়ে চালিয়ে দেয়া যায় (খুবই ছোটলোকি মানসিকতা -- এখন বুঝতেছি --- পড়াশুনার ব্যাপারে এতো কিপটামি না করলেও চলতো)। একদিন তসলিমা ম্যাডামের চোখে পড়লো আমার সেই মাইক্রোস্কোপিক লেখা। ম্যাডাম বললেনঃ "বাপের টাকাই যদি এতো কিপটামি করে খরচ করো, ভবিষ্যতে নিজের টাকা কীভাবে খরচ করবে?..."


(বি এ এফ শাহীন, চট্টগ্রাম)

-----------------------------------
ফেসবুকে এই  পোস্টে আমার কমেন্ট থেকে নেয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন