শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

ঝাল মরিচ

ঝাল মরিচ


 
আমাদের লিটু ভাই,
বড় সম্মানী, তাই
যা কিছু বলেন তিনি
চুপচাপ শুনে যাই।

কিন্তু আকস্মাৎ,
সেদিন সন্ধ্যারাত,
বিতর্ক শুরু হলো
খেতে খেতে ডাল ভাত। 

লিটু ভাই বলে, "শুন,
মরিচের শত গুণ।
খাবারের স্বাদ আসলে
ঝালে, আর লাল ঝোলে।"

তাঁর আজগুবি দাবি-
"ঝাল খেলে বল পাবি,
কচকচিয়ে চাবাবি,
পাতে নিয়ে ডলে খাবি,
আহা! হা হা! কাতরাবি,
তবেই না মজা পাবি!
করিস কী শঙ্কা?
কামড়া, নে লঙ্কা।"
দু মুঠো মরিচ দিয়ে,
বললেন আচমকা।



করলাম প্রতিবাদ,
“রাখো তুমি মিছে বাত”।
বললাম, "সব স্বাদ
ঝালে হয় বরবাদ।
রান্নায় দিলে ঝাল,
তুমি ভালো "কুক্" না।
ঝাল কোনো সুখ না!
বেশি বেশি ঝাল খেলে
জ্বলে কার বুক না?
সাদাসিধা খেয়ে লোকে
আরামে বাঁচুক না।"

কে শোনে হে কথা কার,
রেগে, দিয়ে চিৎকার,
বলে, "পাতে গোটা চার
মরিচ থাকুক না,
কাঁচা কি-বা শুঁকনা;
লাল লাল গুঁড়ো দিয়ে
মাছটা ভাজুক না।
লিখে রাখ মজা পাবি,
আমি মিথ্যুক না।"


ভাবি, আমি কে বলার
সে নেবে তার পাতে কী?
গ্যাস্ট্রিক, আলসার
বাঁধিয়ে বসুক না।
আমারই বা তাতে কী?

তর্ক এড়িয়ে যাই,
আর কথা না বাড়াই,
বিতর্ক করে যাব
কেন তাকে রাগাতে?

আমাদের ঝাল খাওয়ার
উৎসাহ জাগাতে,
সেই সাথে বীরবেশে
প্রশংসা বাগাতে,
তখুনি মরিচ নিয়ে
জিহবার আগা -তে,
কামড় বসিয়ে দিলো
বোম্বাই, নাগা -তে।

মিনিট দশেক পরে,
উঠে পেট চেপে ধরে,
ধাবিতো হলো সজোরে,
লিটু ভাই সাজঘরে।


তারিক মোঃ নাসিম
১১/০১/২০২৪ ইং

সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ছোট্ট শহরের আড্ডা

ছোট্ট শহরের আড্ডা

অরেগন স্টেটের এই ছোট্ট শহর, থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর। হেথায় বসত করে দেশি কিছু ভাই, ইহাদের চাওয়া পাওয়া বেশি কিছু নাই। কেউ চলে সাদাসিধা, আলাভোলা মন, কারও বেশ উন্নত বসন-ভূষণ। বয়েসের ছাপ নাই কিছু চেহারায়, সেজেগুজে ইতিউতি ঘুরিয়া বেড়ায়, প্রতিবেলা পরনেতে নতুন কাপড়, কচি কচি চেহারার বুড়ো বুড়ো বর। অফুরান দম ভরা আছে ফুসফুসে। মনে হয় পা দিলো সে কেবল একুশে। প্রতিদিন আড্ডায় কতো কথা হয়, আড্ডার বিষয় তো ফুরাবার নয়। কারও বা “ধর্ম” প্রিয়, কারো “খেলা” প্রীতি, কারও শুধু ভালো লাগে “দেশ,রাজনীতি”। কেউ বেশ বাকপটু, চাপা জোড়দার, মানিতে চাহেনা কভূ বিতর্কে হার। কেউ বড় চুপচাপ শান্ত স্বভাব, কারও কবি-কবি ভাব, কবিতার অভাব। পাড়ার ধামড়া ছেলে মোরা ভাই ভাই, এক সাথে খেলি আর মসজিদে যাই, জামা’আতে নামাজ পড়ি, রোদ কি বারিষ, কাছে থাকি, তবু হয় দু’রাকাত মিস্‌। মসজিদ প্রাঙ্গণে ফোটে কতো ফুল, গন্ধ শুঁকতে গিয়ে টের পাই ভুল। মসজিদে দুই বেলা আড্ডার ছলে, উঠানেতে রাখি চোখ ডুমুরের ফলে। কেউ মোরা লিকলিকে, কেউ যেন হাতি, গাছে উঠে পেড়ে খাই ফল নাশপাতি। বিষ্যুদবারে রাতে ইফতার খাই, খেতে খেতে হেসে বলি, “রোজা রাখি নাই।” তারিক মোঃ নাসিম ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং

বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪

সরকারি খাঁচা

সরকারি খাঁচা


দু:খ কাহারে বলি,
কথা ছিল যার,
করিবে বিচার,
চালায়েছে সে-ই গুলি!
কী করে সে ব্যাথা ভুলি?

ডাকো যারে জাতি-পিতা,
তাহারি কন্যা,
খুনের বন্যা
বহায়েছে, দেখ নি তা?
কাঁদে ছেলেহারা মা অগনিতা।

চাহিতে গিয়াছি সমতা,
না দিলে না দিবি,
গলায় পা দিবি?
আছে দেখে তোর ক্ষমতা!
এ কেমন নির্মমতা!

কুকুরের পাল পুষে,
দেখাইয়া ভয়
আনবি কী জয়
জনগণ-খুন চুষে?
নাই কি রে তোরা হুঁশে?

এতো তোর গদি প্রীতি?
পাবি কি ভক্ত
ঝরায়ে রক্ত,
দেখাইয়া ভয় ভীতি?
এ কেমন রাজনীতি?

ধ্বসে যাক স্বৈরাচার,
আজ পতনের পালা।
ভেঙ্গে দিব তালা
সরকারি এই খাঁচার।
আশা স্বাধীনভাবে বাঁচার।


তারিক মোঃ নাসিম
৩১ জুলাই, ২০২৪

published on this Facebook post.

বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

শেখের তরী

শেখের তরী

সড়কে গরজে "শেল", ঘন ধোঁয়াশা।
পথ পানে চেয়ে আছি, বুকে হতাশা।
সারি সারি ট্রাকে ভরা
“গান” হাতে এলো তারা,
রাজপথে খুনধারা
বহে সহসা;
কাঁদিতে কাঁদিতে জাতি হারায় ভাষা।

অজস্র কচি মুখ থামিয়ে খেলা,
ন্যায়ের দাবিতে নেমেছিল সে বেলা,
নিমেষেই দেখি চেয়ে
সরকারী গুলি খেয়ে
দেহগুলো খুনে ছেয়ে
লাশের মেলা।
পুত্র হারায়ে মা-টি কাঁদে একেলা।

“গান” নিয়ে, ছুড়ি হাতে যে আসে তেড়ে!
মুখোশের আড়ালেতে চিনি উহারে।
মেরে-কেটে চলে যায়,
জনগণ নিরুপায়,
দেশ লুটে পুটে খায়
সে জানোয়ারে,
জানি গো পাঠালো কোন্‌ "বুড়ি" তাহারে।

হায়া নাই, লাজ নাই! হীন সে বুড়ি!
আমারি ভাইয়ের খুনে রাঙালো চুড়ি!
নিকৃষ্ট সে হৃদয়,
সততার অভিনয়,
মিছা মাতে, কথা কয় -
গাঞ্জাখুড়ি।
দেশবাসী জানে তার ছলচাতুরী।

যতো চায় লুটে খায় অর্থ কড়ি,
উজার করিল দেশ, "নৌকা" ভরি'।
"চেতনা"র ধোঁয়া তুলে,
আদর্শ, নীতি ভুলে,
অহম-দম্ভে ফুলে
ঘুরায়ে ছড়ি,
লুটে পুটে লয়ে যায় শেখের তরী।

বেচে দিতে চাও দেশ কোন্ বিদেশে!
কী খেলা খেলিছ তুমি সর্বনেশে! 
হে দিক-ভ্রান্ত “নাও”
এবার ক্ষ্যান্ত দাও।
আর কত দিতে চাও
পরের দেশে
মায়ের রক্ত শুষে, জালিম বেশে?

---
তারিক মোঃ নাসিম
২৪ জুলাই, ২০২৪


published here on Facebook.

শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

নৌকাডুবি

নৌকাডুবি

 
“নাও” পুড়াইয়া দে,
BAL উড়াইয়া দে,
দপদপাইয়া জ্বলুক রে “নাও”
পদ ছাড়িয়া দিয়া রে আজ পথ ছাড়িয়া দিয়া।

বাংগালি দামালি ছাওয়ে নাওয়ের বাদাম ফাঁড়ে,
আরে নাওয়ের বাদাম ফাঁড়ে,
উথালি পাথালি খুন ছলাৎ ছলাৎ করে,
বুকে ছলাৎ ছলাৎ করে।
আরে খলখলাইয়া হাইসা উঠে
“নৌকা”র হালত চাইয়া, হাসে “নৌকা”র হালত চাইয়া।

---

পুনশ্চঃ “দল-শিবিরের” লোকজন আবার আমার প্রেমে হাবুডুবু খাইয়েন না। আপনাদের উদ্দেশ্যে -

“ইশারায় (ধানের) শীষ দিয়ে আমাকে ডেকো না,
মদূদীর চোখ দিয়ে আমাকে দেখো না।”

আমাদের দরকার টোটাল রিফর্ম, গুয়ের এই পিঠ ওই পিঠ কোনোটার গন্ধই আমরা নিতে চাই না।

published on this Facebook post.

চাটনশীল

চাটনশীল


শোনো! তোমাদেরই বাড়াবাড়ি,
মোরা আগ্রাসী না।
রাম-দা, বুলেট, শেল,
মোটে প্রাণনাশী না।
আর, পথে পথে ফেলা?
সেতো মানুষের লাশই না!
মানুষ হলেই বা কি?
সে-তো "চেতনা"র দাসই না!
আজি এ ক্রান্তিকালে
আমি উন্নাসী না।
তবে, ঝামেলা হয়েছে যেটা-
হৃদয়েতে হাসিনা,
তাই ঝেড়ে কাশি না,
ইনিয়ে বিনিয়ে বলি
নিয়ে কোনো পাশই না।
দায়সারা বুলি ছাড়ি,
সত্য প্রকাশি না।
আ.লীগে সপেছি দিল,
দেশ ভালো বাসি না।


তারিক মো: নাসিম
১৯ জুলাই, ২০২৪

published on this Facebook post.

রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩

গভীর রাতের আড্ডা

টা বছর সময় এরিজোনার টেম্পি শহরে বসবাসের পর সেখান থেকে অরিগন এর পোর্টল্যান্ড মুভ করতে বেশ কষ্ট হয়েছে। মানসিকভাবে আমি সম্ভবত: এখনও পুরাপুরি মুভ করতে পারি নাই। মন পড়ে থাকে টেম্পি' কাঠফাটা পিচগলা পথে, গ্যাস-ষ্টেশনে কিছুদিন পরপর বিভিন্ন ছুতায় ফিরে ফিরে যাই অতি প্রিয় কিছু মানুষের টানে, প্রিয় টেম্পি শহরের টানে। পুরাতন মানুষজনের পাশাপাশি প্রতিবার পরিচয় হয় কিছু নতুন নতুন মানুষের সাথে, আর তাঁদের একেক জনের গুণের বহর দেখে আমি আশ্চর্য হই।

এমনই কোনো এক টেম্পি সফরে কোনো এক গভীর রাতের আড্ডায় দুইজন গুণী মানুষের সুপ্ত প্রতিভার পরিচয় পাই। সেবার টেম্পি থেকে ফেরার পথে বিমানে বসে তাঁদের স্মরণে লেখা এই কবিতা।


***


বিমান গগণে সবে মেলিয়াছে পাখা,

নিভায়েছে বাতি তার তুলিয়াছে চাকা,

বাঁধনে জড়ায়ে সিটে তশরীফ রাখা।


বাহিরে চাহিয়া দেখি টেম্পির হাতছানি,

স্মরণে আসিলো এক শায়ের, আল-"আহসানী",

তার সাথে কতিপয় কৌতুক "হাসানী"


কাতুকুতু দিলো রস আদি, সর্বনাশী!

বদন কাঁপায়ে এলো বেদমক হাসি।

যতোই চাপিতে চাই,

ততোই বাড়িয়া যায়।

যাত্রীরা আঁড়চোখে দেখে ডানে বামে,

তথাপি সে হাসি মোর মোটে নাহি থামে।


হেনকালে এলো কাছে বিমানের বালা,

বালা নন, তিনি যেন জাদরেল খালা,

কষ্টে-সৃষ্টে দিনু হাসি-মুখে তালা।



মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩

হুড-টু-কোস্ট - ২০২৩

 ২০২২ এর জুলাই -এ ওরেগণ আসার পর যখন শুনলাম এইখানে একটা ইভেন্ট হয় যেখানে লোকজন মাউন্ট হুড থেকে একটানা দৌঁড়ে ~২০০ মাইল দূরে সাগর-পাড় পর্যন্ত যায়, তখন এইটাকে পাগলামি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নাই। আমার পাগল মন এই পাগলামি স্বচক্ষে অবলোকন করার এবং স্বশরীরে অনুভব করার লোভ সামলাতে পারলো না। এই কঠিন প্রোজেক্ট ‘পায়ে’ নেয়ার জন্য মন পুরোপুরি প্রস্তুত হলেও আমার দশাসই, বিশালবপু শরীরের প্রস্তুতিহীনতার বহর সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠছিল আমার XXL সাইজের ঢোলা-ঢালা গেঞ্জি ভেদ করে। মিকি’র মাধ্যমে পরিচয় হলো মাহফুজ এর সাথে। মাহফুজ ২০২২ এ এই দৌঁড় এ অংশগ্রহণ করেছে। Hood to Coast 2023 -এ অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে সে তার দল The Broken Bunch - এর জন্য লোক খুঁজছিল। আমি আগ্রহ প্রকাশ করায় সে আমাকে তাদের দল এ অন্তর্ভুক্ত করে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিল।

প্রায় ১০ মাস প্রস্তুতি নেয়ার পর শুক্রবার ২৫ আগস্ট ভোর আড়াইটায় শুরু হলো আমাদের দৌঁড়। মাউন্ট হুড এর টিম্বারলাইন লজ এর সামনে থেকে প্রতিটা দলের দৌঁড় শুরু হয়। একেক দল একেক সময় দৌঁড় শুরু করে। রেজিস্ট্রেশনের সময় দলের সবার গতি জানাতে হয়। দলের সদস্যদের গড় গতি’র উপর ভিত্তি করে HTC কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে সেই দল কখন শুরু করবে। স্বল্প-গতি’র দল আগে শুরু করে, দ্রুত-গতি’র দল পরে শুরু করে যাতে সবগুলা দল মোটামুটি একই সময়ে গন্তব্যে পৌঁছায়।

অন্যান্য রিলে দৌঁড় এর মতো এখানেও দলের একজনের দৌঁড় শেষ হওয়ার পর পরবর্তি জন দৌঁড়ায়। মোট ৩৬ টা ‘লেগ’ (Leg) এ ভাগ করা পুরাটা পথ। ৪-৮ মাইল এর মতো প্রতিটা লেগ এর দূরত্ব। একেকটার কাঠিন্য-স্তর একেক রকম। কোনোটা সহজ, কোনটা কঠিন। কিছু লেগ কঠিন দূরত্বের কারণে, কিছু কঠিন পাহাড়ি রাস্তার চড়াই উৎরাই এর কারণে। কিছু লেগ কঠিন দুপুরের গরম এর কারণে, কিছু লেগ কঠিন কারণ সেগুলায় পিচ-ঢালা পথের পরিবর্তে নুড়িপাথর বিছানো পথে দৌঁড়াতে হয়। দলের সদস্যদের দক্ষতা বিচার করে দলনেতা সিদ্ধান্ত নেয় কাকে কোন লেগ দৌঁড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হবে।

সাধারণত ১২ জনের দল দুইটা Van -গাড়িতে ভাগ করা থাকে। Van 1 -এর ছয়জন প্রত্যেকে  একটি করে লেগ দৌঁড়ায়, তারপর অপেক্ষমাণ Van 2 দৌঁড় শুরু করে। Van 1 -তখন বিশ্রাম নেয় এবং অপেক্ষা করে Van 2 এর দৌঁড় শেষ হওয়ার জন্য। এইভাবে প্রতিটা ভ্যান এর সবাই ৩ বার করে দৌঁড়ায়।

Exchange Point 27 -এ অপেক্ষারত বিভিন্ন দল এর Van 1

Exchange Point 18 - এ The Broken Bunch দলের সদস্যরা


আমাদের দল এর সাকিব এবং দলনেতা ফুয়াদ ব্যাতিত বাকি সবাই প্রথমবারের মতো এই দৌঁড় এ অংশগ্রহণ করেছি। ফুয়াদ এবং  সাকিব ২০২২ এর HTC- শেষ হওয়ার পর (নামকরণের স্বার্থকতা প্রমাণ করে) ভেঙ্গে যাওয়া The Broken Bunch দলের অবশিষ্ট দুই সদস্য। মাহফুজ যদিও নিজে শেষ পর্যন্ত আর আমাদের সাথে দৌঁড় এ অংশ নিতে পারেনি, কিন্তু দলগঠনে এবং প্রস্তুতি নিতে সর্বাত্মক সাহায্য করেছে।

আমাদের দলের সদস্যদের বেশিরভাগই ওরেগণ এর বাহির থেকে এসেছে HTC-তে অংশগ্রহণ করার জন্য। দলনেতা ফুয়াদ-সহ আরও কয়েকজন এসেছে ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য থেকে, ওসমান মামুন এসেছে অস্টিন (টেক্সাস) থেকে, রেজা এসেছে ক্যালিফোর্নিয়ার বে’ এরিয়া থেকে। দৌঁড়ের পুরাটা সময় মূলত নিজের Van 1 এর সদস্যদের সাথেই বেশি সময় কাটানো হয়েছে আমার। আমিনুল জেম ছাড়া এদের কারো সাথেই আগে থেকে পরিচয় ছিল না, কিন্তু এই ইভেন্ট এর মাধ্যমে ভালো সখ্যতা তৈরি হয়েছে।

দলনেতা হিসাবে ফুয়াদ আমাদেরকে পুরা সময় যেইভাবে গাইড করেছে সেইটা প্রশংসনীয়। আমাদের দলের অধিকাংশেরই নিয়মিত দৌঁড়ানোর অভ্যাস নেই - এটা সে ভালোভাবেই জানে, তাই দ্রুত শেষ করার কোন তাড়া সে আমাদের দেয় নি। শুধু সুস্থভাবে শেষ পর্যন্ত গন্ত্যব্যে পৌঁছানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য - এটা সে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে।

Sea Side - এ The Broken Bunch দলের সদস্যরা

মাউন্ট হুড এর টিম্বারলাইন লজ থেকে ‘সি-সাইড’ এর সাগরপাড়ে পৌঁছাতে আমাদের দল এর সময় লেগেছে ৩৮ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট; ১১৬৪ -টি দল শেষ করতে পেরেছে পুরা দৌঁড়, তার মধ্যে আমাদের স্থান ১১৫৮ (শেষ দিক থেকে ষষ্ঠ হয়েছি আমরা)। তেমন গর্ব করার মতো কোন টাইমিং না, কিন্তু আমরা শেষ করতে পেরেই খুশি। দৌঁড় শেষে সি-সাইড এ পৌঁছে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে সবার ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। সেখানে গিয়ে জানলাম বাংলাদেশি বিশিষ্ট “বিজনেস-টাইকুন” মাসুদুর খান ভাই তাঁর সি-সাইড এর বেশ কয়েকটি বাড়ির একটি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন HTC দৌঁড় শেষ করে আসা বাংলাদেশি দলগুলার বিশ্রাম নেয়ার জন্য। তাঁর আন্তরিক আতিথেয়তায় আমরা সবাই মুগ্ধ। দুইদিনের দৌঁড়ের পর ঘাম-চ্যাটচ্যাটে অবস্থায় মাসুদ ভাইয়ের বাসায় গরম পানিতে শাওয়ার নিয়ে আমাদের কেউ কেউ এটাকে জীবনের সেরা গোসল হিসাবেও আখ্যায়িত করলো।


এই দৌঁড় এ অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয় শিখেছি।

১) অল্প হলেও নিয়মিত অনুশীলন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি গত দশ মাসে অনিয়মিতভাবে অনুশীলন করেছি, কোনো সপ্তাহে দুই তিনবার দৌঁড়ানোর পর পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ আর হয়তো দৌঁড়ানো হয় নি। এতে আমার পারফর্ম্যান্স এ আহামরি কোনো উন্নতি হয় নি। আগেও 5mph গতিতে দৌঁড়াইতাম, এখনও সেভাবেই দৌঁড়াই।

২) বাহ্যিক দৈহিক  আকৃতি দেখে মানুষের দক্ষতা বোঝা যায় না সবসময়। HTC -তে আমি 16.5 মাইল এর মত দৌঁড়েছি, একবারও অন্য কোনো দলের কোনো দৌড়বিদকে আমি অতিক্রম করতে পারি নাই, কিন্তু আমাকে অতিক্রম করে গিয়েছে শতশত মানুষ। অতিক্রম করে যাওয়ার সময় আমার সারা শরীরে ক্লান্তি এবং ধীর গতি লক্ষ্য করে অনেকেই “তুমিই পারবে”, “Keep it up”, “Way to go” ইত্যাদি উৎসাহমূলক কথা বলে যাচ্ছিল। এঁদের অনেককেই অন্যত্র দেখলে আমি হয়তো ধরে নিতাম সে আমার চেয়ে নিশ্চয়ই ধীরে দৌঁড়ায়।

৩) এই ধরণের ইভেন্ট এ রাস্তাঘাটে ভিড় হয় অনেক। যেইখানে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে বলে মনে হয়, সেইখানে অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রওয়ানা দেয়া উচিৎ। টয়লেট এর সামনেও অনেক ভিড় হতে পারে, এবং অনিয়মিত ঘুম এবং খাওয়া-দাওয়ার ফলশ্রুতিতে দৌঁড়ের ঠিক আগ-মুহূর্তে উত্তেজনায় “২ নাম্বার” চাপতে পারে। অতএব খাবার নিয়ে কোনো ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে না দৌঁড় এর দিন।

৪) নিজের সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখা বেশি জরুরী। আবহাওয়া খারাপ হলে সেই অনুযায়ী গতি কমিয়ে, প্রয়োজনে বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে সামলে নিতে হবে।

৫) দৌঁড়ানোর সময় “সিঙ্গারা” নয়, ‘বক্সার’ পরিধান করতে হবে।

৬) দৌঁড়ানোর সময় উপযুক্ত গেঞ্জি না পরলে পুরুষ মানুষের বক্ষাগ্র-দ্বয় এ ব্যাথা হইতে পারে, রক্তক্ষরণও হওয়া অসম্ভব নয়। HTC শুরুর আগের রাতে হোটেলে আমাদের একজন তার পূর্ব-অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পর আমরা বাকিরা সবাই তাকে নিয়ে অনেকক্ষণ হাসাহাসি করলাম। পরেরদিন প্রচণ্ড গরমে দৌঁড় শেষ করে এসে আমাদের ষষ্ঠ দৌঁড়বিদ জানালো তার বক্ষাগ্র-দ্বয় জ্বালাপোড়া করছে।

আমাদের দলের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বিশেষ ধন্যবাদ Fuad Nur Taufique, শেষ পর্যন্ত ধৈর্য সহ আমাদেরকে গাইড করার জন্য। ধন্যবাদ Touhid Zaman এবং তার পরিবার-কে আমাদের দুই বেলার খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা করার জন্য। ধন্যবাদ স্বজন এবং তার স্ত্রী-কে, তাদের বাসা-টা আমাদেরকে নিজের বাসার মতো ব্যাবহার করতে দেয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে ঘন্টা-দুইয়েক এর বিশ্রাম অনেক জরুরী ছিল। 

Ai Michael এবং Mahfuzur Rahman -কে ধন্যবাদ The Broken Bunch -এ যোগ দেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য।

ধন্যবাদান্তে

"ষষ্ঠ দৌঁড়বিদ"


Hood to Coast 2023 results

লেখাটি ফেসবুকে আমার এই পোস্ট -থেকে নেয়া।