জানি না এখনকার স্কুলে বাচ্চাদের হাতের লেখার সৌন্দর্যের উপর কতোটা গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সুন্দর হাতের লেখা / হাতের সুন্দর লেখা আমাদের সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ছিল।
পরীক্ষায় শিক্ষকদের মন ভোলানোর একটা বড় হাতিয়ার ছিল ঝকঝকে পরিষ্কার হাতের লেখা।
ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত আমার হাতের লেখা ছিল আক্ষরিক অর্থেই "কাউয়ার ঠ্যাঙ, বগার ঠ্যাঙ"। ষষ্ঠ শ্রেণীতে হুমায়রা ম্যাডামের স্কেলের বাড়ি খেয়েছিলাম, খাতায় আমার বিচ্ছিরি লেখা ম্যাডাম পড়তে পারছিলেন না এই কারণে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম হাতের লেখা ঠিক করতে হবে। ঠিক করলাম ক্লাসে যাদের হাতের লেখা সুন্দর তাদের লেখা নকল করবো। তখন থেকে মেট্রিক পাশ করা পর্যন্ত আমি সম্ভবত ৩০ থেকে ৪০ জনের হাতের লেখা নকল করার চেষ্টা করেছি। প্রথমে শুরু করেছিলাম আমার আব্বার হাতের লেখার মতো লিখতে, সেটা ওই বয়সে বেশ কঠিন মনে হলো, কারণ আব্বার হাতের লেখা ছিল টানা-টানা। এরপর ওবায়দুরের হাতের লেখার মতো লিখতে চেষ্টা করলাম, তারপর কিছুদিন পল্লব এর হাতের লেখা, তারপর ওসমান গণীর "ছাপা অক্ষরের" লেখা। আবদুল্লাহ আল আমিন (মাসুম) এর হাতের লেখাও সুন্দর ছিল, ওইটাও কিছুদিন চেষ্টা করলাম। ক্লাস সেভেন বা এইটে খেয়াল করলাম ফয়সাল বিন হাশেম এর হাতের লেখা অনেক সুন্দর, তৃপ্তি ম্যডাম সার্টিফাই করেছিলেন যে ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দর লেখা ফয়সাল বিন হাশেম এর, তাই ওইটাও কিছুদিন চেষ্টা করলাম। নবম/ দশম শ্রেণীতে জাসেম আল লতিফ আর মইনুদ্দিন চিশতী'র হাতের লেখা নজর কাড়লো, দুইজনের লেখা অনেকটা একই রকম, ছোট ছোট হরফে লিখতো। সেটাও কিছুদিন চেষ্টা করলাম। আব্দুল্লাহ (বাচ্চু)র হাতের লেখা অবিকল ওসমান এর লেখার মতো ছিল। সেটাও আবার কিছুদিন ট্রাই করলাম।
এদের সবার হাতের লেখা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে। এতো বেশি চেষ্টা করেছি...।
এতো ঘনঘন হাতের লেখার ফরম্যাট বদলানোর ফলশ্রুতিতে আমার হাতের লেখা দেখতে আগের মতো দূর্বোধ্য আর রইলো না, কিন্তু গতি অনেক কমে গেলো। পরীক্ষায় আর ফুল আনসার করতে পারি না।
এস এস সি'র টেস্ট পরীক্ষার পর মাস দুইয়েক একটা নির্দিষ্ট হাতের লেখা স্থির করেছিলাম, সেই লেখায় উপরোক্ত অনেকের লেখার ছাপ ছিল। সেই ফরম্যাটেই মেট্রিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্র্যাকটিস করে লেখার গতি কিছুটা বাড়ালাম। কিন্তু তারপরও সমাজে ফুল আনসার করতে পারলাম না। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে টেনেটুনে শেষ করেছিলাম।
ইন্টারে উঠে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম, আব্বার হাতের লেখা নকল করার ট্রাই করলাম আবার। এবার কিছুটা সফল হলাম, জেনেটিক্স কিছুটা সাহায্য করেছে সম্ভবত এইক্ষেত্রে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটা ডায়েরিতে লিখতাম অনিয়মিতভাবে। সেটার একেক পাতায় একেক রকম হাতের লেখা ছিল। শুধু তাই না, ওই ডায়েরিতে আমার লেখা ছাড়াও আমার কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধুর লেখাও ছিল, আবুহেনা, আলাল, বাচ্চু, (শানু?), আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার হলের এক রুমমেট। অনেক ঘটনাবহুল সময়ের স্মৃতিসম্বলিত সেই ডায়েরিটা হারিয়ে গিয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন