সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

"পাপাগো পার্কে"-এ এক বিকালে

বিকালবেলা খুব নিঃসঙ্গ লাগে, ঘরে মন টিকে না, হাঁটার জন্য 'পা চুলকায়', মন চায় - যে দিকে দুই 'পা' যায় সেদিকে চলে যাই। কাঁটাতরু ক্যাকটাসের সংসর্গে গেলে পায়ের এই চুলকানি হয়তো কিছুটা লাঘব হবে এই আশায় আজকে বিকালে বের হয়েছিলাম মরুর বুকে মরুদ্যানের সন্ধানে, কিন্তু আমার "পাষাণ" "ছিদ্রান্বেষী" মন আমাকে টেনে নিয়ে গেল "Hole in the Rock" এ (Scottsdale -এর Papago Park এর কাছে)।

পাথুরে টিলাটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কীভাবে উপরে উঠবো। আমি আসার কিছুক্ষণ আগে একদল অভিযাত্রী এইপাশ দিয়েই উপরে উঠেছে দেখেছি। আমি উপরে ওঠার যুতসই পথ খুঁজতে লাগলাম। একটা সরু পথের মতো পেলাম, কিন্তু ঢাল-টা বেশ খাঁড়া। এখানে সেখানে কিছু ছোটখাটো গর্ত আর কিছু উঁচু হয়ে থাকা পাথর অবশ্য আছে, কিন্তু সেগুলা ছড়ানো ছিটানো। তাছাড়া এই টিলা আমাদের সিলেটের উর্বর মাটির গুল্মসমৃদ্ধ টিলা না যে পা পিছলে গেলে গাছের গোড়া-টা ধরে কিংবা মাটি-টা খামচে ধরে পতন ঠেকাবো। এই ঢাল বেয়ে উঠতে শুধুমাত্র শক্তসমর্থ পা-টা থাকলেই চলবে না, বুকের 'পাটা' থাকাও জরুরী।
ফিরে যাবো চিন্তা করছি এমন সময় দেখি আরও এক দল অভিযাত্রী এসে উপস্থিত, একটা পরিবারই হবে, বাপ-মা এবং পনের-ষোল বছরের একটা মেয়ে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি বিভিন্ন কসরৎ করে সেই "দূর্গম" ঢাল বেয়ে তারা সপরিবারে তরতরিয়ে উপরে উঠে গেলো ! আমি পড়ে গেলাম লজ্জ্বার মধ্যে। এর মধ্যে দেখি এরা উপরে উঠে আমার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে; আমি কী করি সেটা দেখা'র জন্যই হয়তো (মনে হল যেন একটু মিটিমিটি হাসছে-ও, কী জানি হয়তো আমার চোখের ভুলই হবে, দূর থেকে দেখেছি তো...)।
আমি খানিকটা এদিক সেদিক তাকিয়ে, কিছুক্ষণ ইতস্তত করে অবশেষে উঠা শুরু করলাম। পথের দুই পাশে'র পাথুরে দেয়ালে হাত দিয়ে ঠেস দিয়ে উঠতে হচ্ছে। মাঝপথে এসে একটু জিরানোর জায়গা পাওয়া গেলো, খানিক-টা সমতল। ব্যাপারটা যতোটা কঠিন ভেবেছিলাম আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। পরের অংশ-টুকু আরও বেশি খাঁড়া এবং চিপা। বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। নেমে যে যাবো সে উপায়ও নাই, নীচের দিকে নামতে গেলে পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। ...
যাই হোক, বর্ণনা আর দীর্ঘায়িত করলাম না। যেহেতু এই লেখা লিখছি, বুঝাই যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমি মরি নাই। ওজনের দিক থেকে মেট্রিক পদ্ধতিতে 'নার্ভাস-নাইন্টিস্‌'-এ থাকা (অল্পের জন্য 'সেঞ্চুরি' করতে না পারা) আমার এই দশাসই বপুখানা নিয়ে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে কোনমতে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছি। উপরে উঠে আশেপাশে'র দৃশ্য দেখে অবশ্য মন-টা ভালো হয়ে গেল। লোকজন এইখানে আসে মূলত সন্ধ্যা'র সময়েই, সূর্যাস্ত দেখা'র জন্য। আমি সময়মতোই গিয়েছিলাম। খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
উপরে ওঠার পর থেকেই একটা দুশ্চিন্তা পেয়ে বসলো, উঠে তো গেলাম, নামার সময় কি এই ঢাল ধরেই নামতে হবে? হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম, উপরে অনেক লোকের মধ্যে একটা চার-পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চা ছেলেও আছে। তখনই সন্দেহ হল। এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলাম। যা ভেবেছিলাম তাই, টিলা'র অপর পাশে'র ঢাল প্রায় সমতল বললেই চলে। অহেতুক ওই খাঁড়া ঢাল বেয়ে এইখানে উঠেছি। ঘুরে অপর পাশ দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে উঠলেই পারতাম।
শিক্ষা ১ঃ দূর্গম এবং বিপদজনক পথে নামার (/উঠার) আগে ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই।
শিক্ষা ২ঃ আমেরিকান-রা অনেক উদ্ভট কাজই খুব অনায়াসে হাসতে হাসতে করে, সেগুলার সব আমার উপযোগী এবং অনুকরণীয় তো নয়ই, বরং অনেক ক্ষেত্রেই বর্জনীয়।
















লেখাটা ফেসবুকে' এই পোস্ট থেকে কপি পেস্ট করা।
সেখানে ছবিগুলো দেখা যাবে আশা করা যায়। ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন