অতি দ্রুত ড্রাইভিং শেখার খুব বড় কোন প্রয়োজন আমার ছিল না। টেম্পি নগর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত ফ্রি বাস এ চড়ে দিনকাল ভালোই কেটে যাচ্ছে, আর গাড়ি কেনার প্রয়োজন (এবং সামর্থ্য) আপাতত নাই। ড্রাইভিং শিখলে আমার গবেষণাকর্মে সহায়ক হবে - এইরকম একটা গালভরা কাহিনী আমি নিজেই রটিয়েছি; সেটা সত্য হলেও মুখ্য না। অন্তর্নিহিত কোন এক ‘ড্রাইভিং ফোর্স’ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। টেম্পিতে বসবাসরত ভাই-বেরাদারদের অনেকেই আমার এই ‘অন্তরে নিহিত’ আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে ‘যন্তরে নিহত’ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন। মূলত প্রথমদিন ড্রাইভিং সীটে বসে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ব্রেক কোনটা, আর এক্সিলারেটর কোনটা?” - তখনই পিছনের সীটে বসা ধুরন্দর গবেষক অভি বুঝে গিয়েছিল এটা মোটেই আমার অভিনয় নয়। সে অবস্থা বেগতিক দেখে তখনই জান বাঁচানোর উদ্দেশ্যে গাড়ি থেকে নেমে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি ‘ব্রেক’ ভেবে ‘এক্সেলারেটর’ চেপে ধরায় বেচারা নামতে পারে নাই…।
এদিকে আমি গাড়ি চালানো শিখবো শুনে টেম্পির বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে আনন্দোচ্ছাস্ বয়ে গেল, সবাই স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ফেললো এই ভেবেঃ “যাক বেশিদিন তাহলে আর এইসব বস্তাপঁচা লেইম-জোক শুনতে হবে না … তারিক/ভাই আর বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবে/ন না”। আমার বিদায়ের ‘হর্ণ-টা’ বেজে গিয়েছে ধরে নিয়ে দুদিন পরপরই এর-তার জন্মদিনের উৎসবের নাম করে ঘরে ঘরে কেক কাটা এবং তুমুল খাওয়াদাওয়া’র আয়োজন হতে লাগলো এবং বোকার মতো আমি নিজেই এই সমস্ত অনুষ্ঠানে ‘ভুক্ত’ খাবারগুলার সর্বোচ্চ ‘ভোগী’ হতে লাগলাম।
আমার “চিরতরে না থাকা”র ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে সহযোগিতার কর (/car) বাড়িয়ে দিলো নির্মাণ সাহা। সে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে তার (জানালা খোলা থাকা শর্তে-) ‘প্রাকৃতিকভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত’ এবং ঈষৎ অনিয়ন্ত্রিত ব্রেকসম্বলিত খানদানি শেভ্রোলেট মন্টে-কার্লো গাড়িটা আমাকে কদিনের জন্য প্রশিক্ষনার্থে চালাতে দিলো।
এদেশে আসার আগে ঢাকার একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কিছুদিন ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে অনুশীলন করেছিলাম বটে, কিন্তু এখানে এসে সবকিছুই নতুন করে শিখতে হলো। দেশে ম্যানুয়াল গাড়িতে ‘ক্লাস’ হিসেবে পরিচিত যে বস্তুটাকে সঠিকভাবে দাবায়ে রাখতে না পেরে প্রশিক্ষকের ঝারি খেয়েছি নিয়মিত, এখানে এসে শুনি সেটার নাম আসলে ‘ক্লাচ’ (Clutch), এবং সৌভাগ্যক্রমে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলাতে ওই বস্তু থাকে না। উল্টা (/বাম) দিকে সীট, রাস্তার উল্টা (ডান) দিক দিয়ে গাড়ি চালানো এইসব মানাতে বেশি সমস্যা হয় নাই।
বৃহত্তর ফিনিক্স এলাকার স্বনামধন্য প্রশিক্ষক শেখ মিনহাজ হোসেন পাশে বসে নিয়মিত প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করেছে এবং নির্মাণ সাহা পাশে বসে কিছুদিন ‘স্লেজিং’ করেছে। এছাড়া আমার টেস্ট-ড্রাইভে যাত্রী হিসেবে অভি এবং যুবায়ের দুই একদিন গাড়িতে বসে চেহারায় ‘ভয়-না-পাওয়া’ ভাব বজায় রাখার অভিনয় করেছে। ফলশ্রুতিতে সপ্তাহদুয়েক অনুশীলন করার পর গাড়ি চালানোর ব্যাপারে আমি শুধু সিদ্ধ-‘হস্ত’ হয়েছি বললে কম বলা হবে, এই গ্রীষ্মে এরিজোনার কাঠফাটা-পিচগলা উত্তাপে শীতাতপ-অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আমার আপাদমস্তকই সিদ্ধ হয়েছে। অগত্যা এরিজোনা’র পরিবহন বিভাগ আমাকে গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্র দিতে বাধ্য হল।
নির্মাণ অবশ্য এখনও হাল ছাড়েনি, বরং হুইল (স্টিয়ারিং) ছাড়তে উদগ্রীব… শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (কিংবা ‘আমার চিরতরে শেষ হওয়ার খবর’ না পাওয়া পর্যন্ত) সে আমাকে তার এই খানদানি গাড়িটা নামমাত্র ($$$$?) মূল্যে গছিয়ে দেয়ার ধান্দায় আছে।
------------------
Nirman Saha এবং Sheikh Minhaj Hossain - কে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা এতো অনায়াসে পাওয়া সম্ভব হতো না।
এটি ফেসবুকে প্রকাশিত আমার এই পোস্ট এর হুবহু প্রতিলিপি।
এদিকে আমি গাড়ি চালানো শিখবো শুনে টেম্পির বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে আনন্দোচ্ছাস্ বয়ে গেল, সবাই স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ফেললো এই ভেবেঃ “যাক বেশিদিন তাহলে আর এইসব বস্তাপঁচা লেইম-জোক শুনতে হবে না … তারিক/ভাই আর বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবে/ন না”। আমার বিদায়ের ‘হর্ণ-টা’ বেজে গিয়েছে ধরে নিয়ে দুদিন পরপরই এর-তার জন্মদিনের উৎসবের নাম করে ঘরে ঘরে কেক কাটা এবং তুমুল খাওয়াদাওয়া’র আয়োজন হতে লাগলো এবং বোকার মতো আমি নিজেই এই সমস্ত অনুষ্ঠানে ‘ভুক্ত’ খাবারগুলার সর্বোচ্চ ‘ভোগী’ হতে লাগলাম।
আমার “চিরতরে না থাকা”র ব্যাপারটা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে সহযোগিতার কর (/car) বাড়িয়ে দিলো নির্মাণ সাহা। সে এই গ্রীষ্মের দাবদাহে তার (জানালা খোলা থাকা শর্তে-) ‘প্রাকৃতিকভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত’ এবং ঈষৎ অনিয়ন্ত্রিত ব্রেকসম্বলিত খানদানি শেভ্রোলেট মন্টে-কার্লো গাড়িটা আমাকে কদিনের জন্য প্রশিক্ষনার্থে চালাতে দিলো।
এদেশে আসার আগে ঢাকার একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কিছুদিন ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে অনুশীলন করেছিলাম বটে, কিন্তু এখানে এসে সবকিছুই নতুন করে শিখতে হলো। দেশে ম্যানুয়াল গাড়িতে ‘ক্লাস’ হিসেবে পরিচিত যে বস্তুটাকে সঠিকভাবে দাবায়ে রাখতে না পেরে প্রশিক্ষকের ঝারি খেয়েছি নিয়মিত, এখানে এসে শুনি সেটার নাম আসলে ‘ক্লাচ’ (Clutch), এবং সৌভাগ্যক্রমে আধুনিক স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলাতে ওই বস্তু থাকে না। উল্টা (/বাম) দিকে সীট, রাস্তার উল্টা (ডান) দিক দিয়ে গাড়ি চালানো এইসব মানাতে বেশি সমস্যা হয় নাই।
বৃহত্তর ফিনিক্স এলাকার স্বনামধন্য প্রশিক্ষক শেখ মিনহাজ হোসেন পাশে বসে নিয়মিত প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করেছে এবং নির্মাণ সাহা পাশে বসে কিছুদিন ‘স্লেজিং’ করেছে। এছাড়া আমার টেস্ট-ড্রাইভে যাত্রী হিসেবে অভি এবং যুবায়ের দুই একদিন গাড়িতে বসে চেহারায় ‘ভয়-না-পাওয়া’ ভাব বজায় রাখার অভিনয় করেছে। ফলশ্রুতিতে সপ্তাহদুয়েক অনুশীলন করার পর গাড়ি চালানোর ব্যাপারে আমি শুধু সিদ্ধ-‘হস্ত’ হয়েছি বললে কম বলা হবে, এই গ্রীষ্মে এরিজোনার কাঠফাটা-পিচগলা উত্তাপে শীতাতপ-অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আমার আপাদমস্তকই সিদ্ধ হয়েছে। অগত্যা এরিজোনা’র পরিবহন বিভাগ আমাকে গাড়ি চালানোর অনুমতিপত্র দিতে বাধ্য হল।
নির্মাণ অবশ্য এখনও হাল ছাড়েনি, বরং হুইল (স্টিয়ারিং) ছাড়তে উদগ্রীব… শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (কিংবা ‘আমার চিরতরে শেষ হওয়ার খবর’ না পাওয়া পর্যন্ত) সে আমাকে তার এই খানদানি গাড়িটা নামমাত্র ($$$$?) মূল্যে গছিয়ে দেয়ার ধান্দায় আছে।
------------------
Nirman Saha এবং Sheikh Minhaj Hossain - কে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা এতো অনায়াসে পাওয়া সম্ভব হতো না।
এটি ফেসবুকে প্রকাশিত আমার এই পোস্ট এর হুবহু প্রতিলিপি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন